০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৮:৫১ অপরাহ্ন
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২৩
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পুণ্যময় জন্মদিন। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে, এই দিনে আরবের মক্কায় জন্ম নেন এই মহামানব। তাঁর জন্ম বিশ্বের বুকে ইতিহাসের বাঁক বদলে দেওয়া এক অনুপম জীবনাদর্শের সূর্যোদয়। তাঁর হাত ধরে ইতিহাসে লেখা হয় একটি নতুন সভ্যতার নাম—ইসলাম। তাঁর আনীত আদর্শ মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ। তাই এই দিন মুসলিম উম্মাহর আনন্দের দিন।


মহানবী (সা.) পৃথিবীতে আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও বার্তাবাহক। তাই আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীর সব মানুষের নবী ও রাসুল বানিয়ে পাঠান। এ লক্ষ্যে নবুয়তের মহান দায়িত্ব দেওয়ার আগেই তিনি তাঁকে নিখাদ সোনার মানুষে পরিণত করেন। পুরো বিশ্বের ত্রাণকর্তা হিসেবে একজন মানুষের মধ্যে যত গুণের সমাহার দরকার, সব কটিই তাঁকে দান করেন। আদব-আখলাক, মানবিক গুণাবলি ও উন্নত জীবনবোধে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন।


তাই আমরা দেখি, নবুয়ত পাওয়ার আগেই মুহাম্মদ (সা.)-কে আরবের মানুষ একবাক্যে আল-আমিন বা বিশ্বস্ত হিসেবে মেনে নেয়। নবুয়ত পাওয়ার পর যখন মক্কার অধিকাংশ মানুষ তাঁর শত্রু হয়ে যায়, তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে, তখনো তারা তাঁর কাছেই নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র আমানত রেখেছে। হিজরতের রাতে মহানবী (সা.) যখন গোপনে মক্কা ত্যাগ করেন, তখন সেই আমানতগুলো বুঝিয়ে দিতেই হজরত আলী (রা.)-কে মক্কায় রেখে যান।


৬৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের পুরোটাই মহানবী (সা.) মানুষের কল্যাণে নিবেদিত রেখেছেন। পুরো আরব যখন অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে ছিল, অশিক্ষা, কুসংস্কার, হানাহানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন যখন চরমে পৌঁছেছিল, তখন তাদের মুক্তির দিশারি হয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। নবুয়তের ২৩ বছরের কঠিন মেহনতের মাধ্যমে তিনি এমন এক সোনালি প্রজন্ম তৈরি করেন, যাঁদের হাত ধরে ইসলাম ও মানবতার বাণী পৃথিবীর আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ে।


ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, ধৈর্য, ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য এক উদাহরণ তিনি পৃথিবীর সামনে পেশ করেছেন। মক্কার অবর্ণনীয় কষ্টের ১৩ বছর শেষে মদিনায় তিনি এমন আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে কোনো ধরনের জুলুম ও বর্ণবৈষম্য ছিল না। মানুষের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। দাস মুক্ত করেন। শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য বুঝিয়ে দেন। ইসলামের মহান আদর্শ প্রচারের যে দায়িত্ব মহান আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন, তা পালন করেই পৃথিবী ত্যাগ করেন।


আজকের পৃথিবী এক অস্থির সময় পার করছে। মুসলমানরা মহানবী (সা.)-এর আদর্শ ভুলে, নিজেদের সোনালি অতীত ভুলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ, হানাহানি, হিংসা ও অসহিষ্ণুতার চর্চায় ব্যস্ত। এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের তাঁর মহান জীবনাদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। তাই তাঁর আনীত শান্তির বাণী নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন ও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর শিক্ষা ও অঙ্গীকার।


শেয়ার করুন