৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৭:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন
দুর্গাপুরে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে কব্জায় আলুর বাজার, স্বস্তি নেই অন্য পণ্যেও
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৯-২০২৩
দুর্গাপুরে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে কব্জায় আলুর বাজার, স্বস্তি নেই অন্য পণ্যেও

দুর্গাপুরে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে আলুর দাম। পাশাপাশি সব ধরনের সবজির দামও বেড়ে গেছে  দ্বিগুন। বাদ নেই মাছ, মাংস ও মসলার বাজারও। অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেতারা। বর্তমানের দাম বেড়ে আলুর জাত ও মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।


অথচ কৃষক পর্যায় থেকে এই আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। এদিকে আলুর দাম নিয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় খুচরা বাজারে আলুর দাম সর্বোচ্চ ৩২ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। অথচত সেই প্রতিবেদনটিকে কোনোই তোয়াক্কা করছেন না ব্যবসায়ীরা। অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে এই আলুর দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটির সুপারিশে জোর দিয়েছে বলা হয়েছে- যেসব অসাধু ব্যবসায়ী আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে তাদের দ্রুত তদারকির মধ্যে আইনের আওতায় নেয়া হবে।


অথচ বাজার মনিটরিং না থাকায় এমন অস্থিতরা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যবৃত্ত পরিবারে প্রধান সদস্যদের এমন অস্থিরতার বাজারে পরিবারের সদস্যদের মুখে অণ্য তুলে দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া হিমাগার থেকে চাহিদা অনুুযায়ী আলু ছাড়করণ করতে নেই কোনো মনিটরিং। ফলে ইচ্ছেমত পাইকারা বেসি টাকার ভাউচার তৈরী করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কৃত্তিম সংকট দেখিয়ে তাদের কাছে বেষি দামে বিক্রি করছেন আলু। এতে করে বাজার নিয়ন্ত্রণে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।


জানা গেছে, এ বছর চাহিদার তুলনায় দেশে ২২ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন ও মজুত রয়েছে। সারাদেশে মোট আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২২ লাখ টন আলুর বেশির মজুত রয়েছে। চাহিদার বেশি আলু রপ্তানির চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু দ্রবমূল্য ঊর্ধ্বগতির মুখে দেশে গড়ে উঠছে পণ্যভিত্তিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এরই অংশ হিসেবে আলুর দাম বাড়াতে তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, আলু এমন এক ভোগ্যপণ্য যা সব ধরনের তরকারিতে ব্যবহার করা যায়। সব ধরনের খাদ্যে ব্যবহার হয় আলু। এ কারণে এ পণ্যটির দাম বাড়লে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য।


গত রবিবার দুর্গাপুর সিংগা হাটে খুচরা আলুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ আগে তারা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছেন ৩০-৩৫ টাকা। যা বর্তমানে বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা কম দামে আলু কিনে আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। যার কারনে আমাদেরও বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বহরমপুর গ্রামের ক্রেতা আলামিন জানান, আমাদের মত মধ্যবৃত্ত পরিবার কোথায় গিয়ে দাড়াবে বলতে পারেন?। বাজারে যে হারে সকল পণ্যের দাম হুহু করে বেড়েই চলেছে তাতে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। কদিন আগেই যে আলু ৩০ টাকায় কিনলাম সে আলু এখন ৫৫টাকা। বর্তমানে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিও মিলে না। এছাড়াও মাছ, মাংসের দিকেতো তাকাতেই পারি না।


ব্যবসায়ী জয়নাল আলী জানান, দুর্গাপুরে আলু ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশাল সিন্ডিকেট। তারা ভোরে বাজারে আলু নিয়ে এসে সব আলু ও সবজি ব্যবসায়ীদের নিয়ে মিটিং করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সবাই মিলে এক দামে আলুসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রিয় করেন। যার কারনে বাজারে আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের এমন প্রভাব দেখা দেয়। এদিকে কয়েকজন ক্রেতারা বলছেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় মুলত বাজারের এমন পরিস্থিতি।


সিংগা গ্রামের দিনমজুর ওয়াজ নবী বলেন, মানুষের কাজ যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানোই বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন ৫শ’ টাকা নিয়ে বাজারে গেলে বাজার ব্যাগের তোলায় পড়ে থাকে। সব কিছুরি দাম বেড়েছে দ্বীগুন অথচ আমাদের আয় বাড়েনি।


দুর্গাপুরে এক হিমাগার ম্যানেজারের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, হিমাগার গুলোতে পর্যাপ্ত আলু মজুদ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলুর কৃত্রিম শংকট দেখিয়ে বাজারে এমন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। হিমাগর থেকে যে সকল আলু বের করা হচ্ছে তা প্রকার ভেদে চাষিরা বিক্রি করছেন ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। অথচ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তা বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন দ্বিগুন দামে।


এমন বাজার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ক্রেতাদের রক্ষায় বাজারে ভ্রাম্যমান পরিচালনার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন ক্রেতারা।


শেয়ার করুন