৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:১৬:২৩ পূর্বাহ্ন
পূর্বাচল সংযোগ সড়ক: ৫২৭ কোটিতেও পানি জমে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
পূর্বাচল সংযোগ সড়ক: ৫২৭ কোটিতেও পানি জমে

পূর্বাচল সংযোগ সড়কে বিরতিহীন যানবাহন চলাচল নিশ্চিতে প্রায় ৫২৭ কোটি টাকার পাঁচটি অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশনের নিচের সড়ক জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে পড়েছে। এই আশঙ্কা জাগছে অতিবৃষ্টির পানি ধরে রাখতে রিজার্ভ ট্যাংকের ক্ষমতার কারণে। জেনারেটর চুরির কারণে পানি বের করতে না পারায় গত ঈদুল আজহার সময় জলাবদ্ধতায় পাঁচ-ছয় দিন অচল ছিল গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক। 


এরপরই বিষয়টি আলোচনায় আসে।


রাজধানীর কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত এই সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাস্তবায়নাধীন মোট ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অংশ এসব অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশন। পুরো প্রকল্পটি আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর) উদ্বোধন হওয়ার কথা। 


স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে প্রকৌশলগত দিক বিবেচনা না করে এসব ইন্টারসেকশন যুক্ত করা হয়েছে। হাইড্রো-ইকোলজিক্যাল বিষয়টিও এখানে গুরুত্ব পায়নি। উন্মুক্ত স্থানে যন্ত্রনির্ভর এমন স্থাপনা করা উচিত হয়নি। বাস্তবতাবিবর্জিত এ কাজ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলবে।


তবে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) উজ্জ্বল মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদের সময় অতিবৃষ্টির পানি জেনারেটর চুরি যাওয়ার পাম্প করতে না পারায় জমে ছিল। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তার পানি পাম্প করেই বের করা যাবে। তাই জলাবদ্ধতার কোনো ঝুঁকি তাঁরা দেখছেন না।


রাজউকের সূত্র বলেছে, কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পূর্বাচল সংযোগ সড়কের উভয় পাশে ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ, ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল খনন ও উন্নয়ন, স্লুইসগেট ও পাম্পহাউস নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, পাঁচটি অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশন নির্মাণ, বর্জ্য ও পানি নিষ্কাশনের জন্য জিআরপি পাইপ স্থাপন, সেতু, ওয়াকওয়ে, ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ, ট্রাফিক সাইন ও রোড মার্কিং, ওয়াটার বাসস্টপ, আরবরিকালচার।


কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত মূল সড়কের দুই পাশে ১০০ ফুট করে দুটি খাল এবং খালের দুই পাশে একাধিক লেনের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। সার্ভিস রোডের সঙ্গে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা যুক্ত করার জন্য গেটওয়ে রয়েছে। সর্বশেষ এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। কাজের জন্য ইতিমধ্যে ৯ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে।


প্রকল্প সূত্র বলেছে, সড়কে পাঁচটি আধুনিক অ্যাট-গ্রেড ইন্টারসেকশন নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুটি ইন্টারসেকশন কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত অংশে এবং অপর তিনটি বালু নদী থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত অংশে। পাঁচটির নির্মাণকাজই শেষ। ইন্টারসেকশনগুলোর নিচের সড়কটি সমতল থেকে ১৫ ফুট নিচে। এ কারণে প্রতিটি ইন্টারসেকশনে দুটি করে পানির রিজার্ভ ট্যাংক রয়েছে। দুটি ট্যাংকের পানি ধারণক্ষমতা মোট ৩১ লাখ লিটার। ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও ট্যাংক দুটি পূর্ণ হতে চার ঘণ্টা লাগবে। বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় পানি পাম্পের জন্য প্রতিটি ইন্টারসেকশনে একটি করে জেনারেটর বসানো হয়েছে। তবে গত ঈদুল আজহার সময় ভারী বর্ষণে এসব ইন্টারসেকশনের সব ট্যাংক পানিতে পূর্ণ হয়ে ওপরের অংশও ডুবে যায়। কিন্তু জেনারেটরগুলো চুরি হওয়ায় পাম্প করে পানি সরানো যায়নি। ঈদের ছুটির কারণে নতুন জেনারেটরও কেনা যায়নি। ফলে পাঁচ-ছয় দিন তলিয়ে ছিল ইন্টারসেকশনগুলোর নিচের সড়ক। পরে ১৪০ কেভির জেনারেটর কিনে এনে বসানো হয়। পানি নিষ্কাশন করে সড়ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। এসব জেনারেটর চালাতে প্রতিটির জন্য ঘণ্টায় ১২ লিটার জ্বালানি তেল লাগে।


রাজউকের পূর্বাচল সংযোগ সড়কের উভয় পাশে ১০০ ফুট প্রশস্ত খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) জামিল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৭ ভাগ শেষ হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের পর যেকোনো দিন প্রকল্পটি উদ্বোধন হবে। ইন্টারসেকশনগুলোর একটি সড়ক ১৫ ফুট নিচে হওয়ায় এগুলো খালের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই পাম্প করে পানি সেচের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন সবকিছু ঠিক আছে। আর যত বৃষ্টিই হোক, সমস্যা হবে না।’


শেয়ার করুন