২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:১৯:৪৩ অপরাহ্ন
যুদ্ধ চাই না, তবে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২৩
যুদ্ধ চাই না, তবে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেন সুরক্ষিত থাকে, সেদিকেই আমাদের দৃষ্টি। সে কারণেই আমরা নৌবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে সার্বিকভাবে উন্নত-সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছি। বুধবার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নৌবাহিনীর নবনির্মিত ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা, ৪১ পিসিএস-এর ৪টি জাহাজ এবং ৪টি এলসিইউ-এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল।


শুরুতেই বিএনএস শের-ই-বাংলা, ৪১ পিসিএস-এর চারটি জাহাজ ও চারটি এলসিইউ-এর ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। নৌবাহিনীর প্যারেড ও সাজসজ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছিল অনুষ্ঠানে। চালু হওয়া এই ঘাঁটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা বন্দরসহ উপকূলীয় এলাকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌ-সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।


অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর এম মহব্বত আলীর হাতে কমিশন ফরমান তুলে দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। এ সময় নৌবাহিনীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খুলনা শিপইয়ার্ডে পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রোনের (পিসিএস) চারটি যুদ্ধজাহাজ বানৌজা শহিদ দৌলত, শহিদ ফরিদ, শহিদ মহিবুল্লাহ ও শহিদ আখতার উদ্দিন এবং চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইনের নেমপ্লেট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।


শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে সর্বোচ্চসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, গড়ে তোলা হয়েছে হেলিকপ্টার ও টহল বিমানসমৃদ্ধ নেভাল এভিয়েশন এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস। সমুদ্রে নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে হেলিকপ্টার ছাড়াও একাধিক যুদ্ধজাহাজ এবং সরঞ্জামাদি ক্রয় ও নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’


তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের নৌবাহিনীর প্রয়োজন নিজেদের রক্ষার জন্যই। সাইক্লোন মোকাবিলা করার জন্য। আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার।’


নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গত সাড়ে ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ অনুযায়ী নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবহরে এভিয়েশন ও সাবমেরিন সংযোজন করেছে। যার মাধ্যমে নৌবাহিনী বিশ্বদরবারে আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা নিজেদের জাহাজ নিজেরা তৈরি করতে পারছি। আমরা চাই আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাক। আমাদের নৌবাহিনী এখন অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। নৌবাহিনী ‘বায়ার নেভি’ (ক্রেতা) থেকে ‘বিল্ডার নেভি’তে (নির্মাতা) পরিণত হয়েছে।’


বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি এবং নৌবাহিনীর ৮টি জাহাজের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ঘাঁটি এবং জাহাজগুলো নিজ নিজ অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা, দেশি-বিদেশি জাহাজগুলো নিরাপদে সমুদ্রপথে চলাচল, উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বিধান, চোরাচালান প্রতিরোধ, অনুপ্রবেশের মাধ্যমে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধ এবং বিভিন্ন দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’


নৌবাহিনীর কাজের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনী শুধু দেশে না, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও বিশাল অবদান রেখে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেও সুনাম অর্জন করছে। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ভূমধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের আওতায় সফলভাবে নিয়োজিত থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।’


বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইটুকু দাবি করতে পারি, ২০০৯-এ সরকারে আসার পর এখন ২০২৩ সাল-এই সময়ে বাংলাদেশ বদলে গেছে। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এই দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’


তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা সূবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ। সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’


প্রসঙ্গত, আধুনিক সব সুবিধা সংবলিত ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে রয়েছে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর পাশাপাশি অপারেশনাল কার্যক্রমের সুবিধার্থে প্রশাসনিক ভবন, এভিয়েশন সাপোর্ট ও হ্যাঙ্গার সুবিধা মাল্টিপারপাস শেড, বিভিন্ন রিপেয়ার ও মেনটেইন্যান্স ওয়ার্কশপ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে এভিয়েশন সুবিধা, ডাইভিং স্যালভেজের কমান্ডো পরিচালনা সংবলিত ইউনিট, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল।

শেয়ার করুন