০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০১:৪৮:১৩ অপরাহ্ন
হাট এবারও দলীয় নেতা ও ঘনিষ্ঠদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২৩
হাট এবারও দলীয় নেতা ও ঘনিষ্ঠদের

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় বসছে ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট। এর মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ১৫টি হাটের ইজারাই পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা। বাকি দুটি হাটের দরপত্র প্রক্রিয়া ২০ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবছরই অস্থায়ী হাটগুলোর ইজারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা নেন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।


ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা বলেছেন, উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বেশি দর দিয়েছেন, তাঁরাই ইজারা পেয়েছেন। এখানে রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো ভূমিকা নেই।


রাজধানী ঢাকায় দুটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এর একটি ডিএনসিসি এলাকায় গাবতলী হাট। অন্যটি ডিএসসিসি এলাকার সারুলিয়া হাট।


কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এর বাইরে ডিএনসিসি এলাকায় ৮টি এবং ডিএসসিসি এলাকায় ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে।


ডিএনসিসির ৮টি অস্থায়ী পশুর হাট ১৭ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। এলাকা ঘুরে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ডিএনসিসির ভাটারার সাঈদনগর পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ৪০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ৬ কোটি টাকায় উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মহিবুল হাসান। ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গায় পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন কামাল হোসেন। তিনি সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্যাহর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় মোহাম্মদপুরের বছিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গার ইজারা পেয়েছেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের ঘনিষ্ঠ এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া।


৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকায় তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠে পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন খান। তিনি গত বছরও ইজারা পেয়েছিলেন। ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় কাওলা শিয়ালডাঙ্গা পশুর হাট পেয়েছেন ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম। ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের রহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গায় হাটের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জেহাদ-আল ইসলাম।


আপিল বিভাগ হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করায় আফতাবনগর হাট বসতেও বাধা নেই। ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা দর দিয়ে এটি ইজারা পেয়েছেন আব্দুল মান্নান। তিনি মহানগর উত্তরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।


জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেশি দরদাতাকে হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। গতবারের না নতুন ইজারাদার–সেটি যাচাই করিনি। কারও রাজনৈতিক পরিচয়ও বিবেচিত হয়নি।’


এদিকে ডিএসসিসির ৯টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৭টি ইজারা দেওয়া হয়েছে মোট ২০ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকায়। বাকি ২টি অর্থাৎ উত্তর শাহজাহানপুর রেলগেট বাজারসংলগ্ন হাট ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন হাটের ইজারা ২০ জুন সম্পন্ন হওয়ার কথা।


ডিএসসিসির রহমতগঞ্জ ক্লাব পশুর হাটের ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম। তিনি চতুর্থবারের মতো ইজারা পেলেন। এবার দর দিয়েছেন ৫৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ মাঠে হাটের ইজারা পেয়েছেন ওয়াহিদুর রহমান ওয়াকিব। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন।


৩ কোটি ১ লাখ টাকায় মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন হাটের ইজারা পেয়েছেন খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আওরঙ্গজেব টিটু। ৫০ লাখ টাকায় ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গার ইজারা নিয়েছেন ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের বড় ভাই জসিম উদ্দিন। ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকায় যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজসংলগ্ন হাট ইজারা পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামরুজ্জামান। ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন হাটের ইজারা পেয়েছেন মোহাম্মদ হোসেন। পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাটের ইজারা পেয়েছেন শাহনুর রহমান ২ কোটি ৮১ লাখ টাকায়। এ দুজনও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।


এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, দরপত্রে দাখিলকারীর শুধু নাম থাকে, রাজনৈতিক পরিচয় থাকে না। তাঁর জানামতে, এবার কোনো কাউন্সিলর ইজারা পাননি।


শেয়ার করুন