২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০২:০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীর ভোটের রাজনীতিতে আলোচনায় ডাবলু পরিবার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৩
রাজশাহীর ভোটের রাজনীতিতে আলোচনায় ডাবলু পরিবার

 রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়ন বঞ্চিতরা দলের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামবে কি-না বা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছে কি-না এ নিয়ে নেতাকর্মীরাও রয়েছেন সংশয়ে।

বিশেষ করে প্রার্থী ঘোষণার পর নগর আওয়ামী লীগের দুইটি কর্মসূচীতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের অনুসারিদের দেখা যায়নি। ফলে এবারের সিটি নির্বাচনে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও তাদের সংখ্যা সামন্য বলছেন স্থানীয় নেতারা।

আর দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, যারা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং বিতর্কমুক্ত কি-না সেটা বিবেচনা করেই প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। শুরুতে কিছুটা বিভেদ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। আওয়ামী লীগ করতে হলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন, যোগ্যতা, দক্ষতা, জনপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন জরিপ বিবেচনায় নিয়ে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তৈরি হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীও বেশি থাকে। এটা খারাপ কিছু নয়। আমরা তাদের বুঝিয়ে বসানোর চেষ্টা করি। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও দলের সিদ্ধান্তের পর বেশির ভাগই বসে যান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে থেকে যান। কারণ আমরা তো কাউকে নির্বাচন করতে বাধা দিতে পারি না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চতুর্থবারের মতো দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। লিটনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মিছিল হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রোববার বিকালে নগরীর রানীবাজারস্থ খায়রুজ্জামান লিটনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। এর আগের দিন কুমারপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। সেখানে দলীয় মনোনয়ন ও ভোটের প্রস্তুতি বিষয়টি তোলে ধরে বক্তব্য রাখেন খায়রুজ্জামান লিটন।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের এই দুইটি কর্মসূচীতে ছিলেন না কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সহসভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন। তারা দুজনই রাজশাহী সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

এছাড়া ডাবলু সরকারের বোন জামাই রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর ইকবাল, ডাবলুর ভাগনে এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন, ডাবলুর ভাই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার এবং আরেক ভাই নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ সরকার ওরফে সেডু সরকারও ছিলেন না মহানগর আওয়ামী লীগের দুইটি কর্মসূচীতে। এই দুই কর্মসূচীতে দেখা যায়নি ডাবলু সরকারের অনুসারী কতিপয় নেতাকর্মীদেরও।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকারের বিরোধ এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে। সম্প্রতি গণভবনে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ডাবলু সরকার খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন।

এছাড়াও এবারের নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটন মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা মোটামুটি সবার জানা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে লিটনও জানিয়েছিলেন গ্রিন সিগন্যালের কথা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেন। তবুও ডাবলু সরকার মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। মুলতঃ এর পর থেকে প্রকাশ্যে আসে তাদের দ্বন্ধ।

ফলে এই নির্বাচনে ডাবলু দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে যাবেন কিনা অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন কিনা; আবার ভোটের মাঠ থেকে সরলেও দলীয় প্রার্থী পক্ষে কতটা সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। রাজশাহীর রাজনীতিতে এখন আলোচনায় ডাবলু সরকার পরিবার।

এ বিষয়ে জানতে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডাবলু সরকারকে পাওয়া যায়নি। কিছুদিন থেকে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন না।

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে এক যোগে মাঠে নিমেছে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আমরা আশা করছি ডাবলু সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার পক্ষে থাকবে।

তিনি বলেন, ডাবলু সরকার পরিবার যদি মাঠে নাও থাকে তবে নৌকার ভোটের তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ হাতে গোনা কয়েকজন নেতা তাদের সঙ্গে আছে।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে আমি আশা করি, যারা আওয়ামী লীগ করে তারা সবাই নৌকার পক্ষে একযোগে কাজ করবে।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে প্রথমবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও তিনি বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃতীয়বারের মত দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মত মেয়র পদে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও ২০১৩ ও ২০১৮ সালে খায়রুজ্জামান লিটনের বিপক্ষে কেউ দলীয় মনোনয়ন চায়নি।

শেয়ার করুন