০৯ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার, ০৪:০৬:৩২ পূর্বাহ্ন
শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল, যাত্রায় দেরি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৫
শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল, যাত্রায় দেরি

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিমান চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে দেশটির ঐতিহাসিক শাটডাউনের প্রভাবে। শুক্রবার একদিনেই পাঁচ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে। সরকারি কার্যক্রম স্থবির থাকায় বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (এফএএ) বিমানসংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছে।


সরকারি অর্থ বরাদ্দ বন্ধ থাকায় হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী, বিশেষ করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বেতন ছাড়াই কাজ করছেন। এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা সংসার চালাতে অন্য কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এফএএ জরুরি নির্দেশনায় শুক্রবার থেকে ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ফ্লাইট ৪ শতাংশ কমিয়েছে; আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।


সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও ওয়াশিংটন ডিসির মতো ব্যস্ত বিমানবন্দরে। এফএএর বরাতে জানা গেছে, কর্মীসংকটের কারণে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ বেড়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে, যা যাত্রীদের নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।


জাতীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিক ড্যানিয়েলস জানিয়েছেন, তাদের কর্মীদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি বানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সমস্যা আরও বাড়বে। নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করব; কিন্তু নিজেদের পকেটে টাকা ভরতে পারব না। সরকার খুলতে কংগ্রেসেরই ব্যবস্থা নিতে হবে।’


পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফি বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আপাতত প্রভাবমুক্ত থাকলেও যদি সরকার বন্ধ অব্যাহত থাকে, তবে ফ্লাইট কাটছাঁট ২০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।


বিমানবন্দরে ইতোমধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। অনেকে বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন—কেউ ট্রেনের টিকিট কেটেছেন, কেউ আবার ভিন্ন শহর হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।


ওয়াশিংটনের রিগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরে আটকে পড়া যাত্রী জো সুলিভান জানান, তিনি আটলান্টায় আত্মীয়ের বিয়েতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ১২ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে নতুন টিকিট পেয়েছেন। ‘আজ রাতেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, এখন বাড়ি ফিরে বসে থাকতে হবে,’ বলেন তিনি।


অন্যদিকে, নিউইয়র্কগামী যাত্রী নডেনিসারিয়া মিকিনস বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ভ্রমণ করা মানেই দুশ্চিন্তা। আমরা নিরাপত্তার জন্য পুরোপুরি ভরসা রাখছি সেই কর্মীদের ওপর, যারা এক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।’


একইসঙ্গে সরকার বন্ধের কারণে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন খাতেও অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে। ফেডারেল কর্মী আরিয়ানা ইয়াকোভলজেভিচ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। এখন এক মাস ধরে বেতন পাইনি। ভাবিনি এমন পরিস্থিতি দেখতে হবে।’


এদিকে, ওয়াশিংটনে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে আলোচনায় কিছুটা নড়াচড়া দেখা গেলেও সমাধানের ইঙ্গিত মেলেনি। সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের নতুন অর্থায়ন প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ এটি রিপাবলিকানদের সমর্থন পাচ্ছে না।


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছেন, সিনেটে ফিলিবাস্টার নিয়ম তুলে দিলে রিপাবলিকানরা একাই সরকার পুনরায় চালুর বিল পাস করতে পারবে। তবে উভয় দলই এ প্রস্তাবে সমর্থন দিচ্ছে না।


ট্রাম্প শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, ‘সিনেট কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো পর্যন্ত শহর ছাড়বে না। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে রিপাবলিকানদের উচিত ফিলিবাস্টার বন্ধ করে আমেরিকার শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া।’


৩৮ দিন ধরে চলা এই স্থবিরতা কবে শেষ হবে—সেটি এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু বিমান চলাচল ও জনজীবনের ওপর এর প্রভাব দিন দিনই গভীর হচ্ছে।


শেয়ার করুন