২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৭:৫৯:০৩ অপরাহ্ন
ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প: চারঘাটের খামারিদের ৩০ লাখ টাকা কর্মকর্তার পকেটে
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প: চারঘাটের খামারিদের ৩০ লাখ টাকা কর্মকর্তার পকেটে

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মুরগি ও ছাগলের খামারিদের উন্নয়নের জন্য সরকারি অর্থে ১৫০টি ঘর (খামার) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজশাহীর ৯টি উপজেলাতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রতিটি খামারিকে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০ হাজার টাকার একাউন্ট পে চেক দেওয়া হয় খামারিদেও অনুকূলে। তবে চারঘাটে ওই চেক পাওয়ার পরেও খামারিদেরকে টাকা তুলে পরবর্তিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নিকট জমা দিতে হয়েছে। এর ফলে ১৫০ জন খামারির নামে বরাদ্দকৃত ৩০ লাখ টাকা জমা হয়েছে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ওয়াসিম আকরামের পকেটে।


বিষয়টি তিনি স্বীকারও করেছেন। তবে ওই টাকা দিয়ে খামারিদের তিনি নিজেই ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন বলেও দাবি করেছেন। ঘর নির্মাণের বিষয়টি খামারিরাও স্বীকার করেছেন। তবে ঘর নির্মাণের জন্য যেসব উপাদান দেওয়া হচ্ছে-তা নিম্নমাণের এবং ২০ হাজার টাকা থেকে অন্তত ৫ হাজার টাকা পকেটে ভরছেন ওই কর্মকর্তা। আর এই অনিয়ম করতেই ১৫০ খামারিকে দেওয়া চেকের ৩০ লাখ টাকা নিজের পকেটে পুরেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। এ নিয়ে চারঘাটের খামারিদেও মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরী হয়েছে। তবে পরবর্তিতে বিষয়টি নিয়ে খামারিরাই উল্টো বিপাকে পড়বেন বলে অনেকেই ভয়ে মুখ খুলছেন না।


চারঘাটের পান্নাপাড়া গ্রামের আসমা বেগম নাসের এক ছাগল খামারি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে ২০ হাজার টাকার চেক দেওয়ার পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমপরিমাণ টাকা তাঁকে জমা দিতে নির্দেশ দেন। আমি ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকার চেক ভাঙানোর পরে সেই টাকা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ওয়াসিম আকরামকে দিয়ে অ্যাসেছি। কিন্তু তিনি যে মুগরির ঘর করে দিয়েছেন, তাতে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। বাকি টাকা তিনি মারি দিছেন।’


তিনি আরও বলেন, ‘১৫-১৬ দিন আগে আমাকে একটা ছাগলের ঘর তৈরী করে দিছে। ঘরের ওপরে তিনটা টিন কেটে দুই ভাগ করে দুইদিকে লাগাইছে। আর ৬টি সিমেন্টের খুঁটি। চার পাশে বেড়াও দেয়নি। এই ঘর করতে কি করে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়? প্রশ্ন করেন আসমা বেগম।


একই এলাকার আরেক খামারি সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার নিকট থেকেও ২০ হাজার টাকার চেক দিয়ে ওই টাকা নিছেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। যে ঘর করে দিছে, ওই ঘরে কখনোই ০১ হাজার টাকার উপরে খরচ হবে না।’


পরানপুর গ্রামের নাফিউন নাহার বলেন, ‘চারটি খুঁটি দিয়ে আর তিনটি টিন দিয়ে একটা মুরগির ঘর করে দিছে। নিচে মাচা ও সাইড দিয়ে নাকি তারের বেড়া দিবে। এখনো দেয়নি। কিন্তু টাকা তুলে আমি প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি।’


এদিকে, চারঘাট উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের আওতায় নিযুক্ত আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া একজন মাঠকর্মী কালের অভিযোগ করে বলেন, ‘১৫০ জন খামারির সমস্ত টাকা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা নিয়েছেন। তিনিই ঘরের মালামাল তাঁর ইচ্ছেমতো কিনছেন। আমরা সেসব ঘর তদারকি করছি শুধু।’


এ উপজেলায় আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া লাইভ স্টক ফিল্ড অফিসার পদে কায়ছার আহমদের পরিবর্তে জিয়াউর রহমান নামের একজন চাকরি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।


পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুবির কুমার বলেন, আমাদের উপজেলায় ৮৩জন খামারি এ ঘর পাচ্ছেন। আমরা চেক দিয়ে দিয়েছি। খামারিরা নিজেরাই মালামাল কিনে ঘর করছেন। আমরা শুধু তদারকি করছি। টাকা নিজের কাছে রাখার সুযোগ নাই।’


তবে খামারিদের টাকা নিজের কাছে রাখা বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, ‘খামারিদেও টাকা আমি নিছি। তবে আমার কাছে নাই। ওই টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে।’


খামারিদের টাকা আপনার পকেটে কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অফিসে আসেন প্লিজ সাক্ষাতে বিস্তারিত জানাবো।’


জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুলফিকার আক্তার বলেন, ‘ওই প্রকল্পের বিষয়টি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারাই দেখ-ভাল করছেন। কিন্তু খামারিদের টাকা তো কারো নিকট রাখার কথা নয়। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


শেয়ার করুন