কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধানসহ শীতকালীন সবজির খেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতে নিচু এলাকার ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সরিষা, ফুলকপি, আলু, পেঁয়াজের বীজতলা, গাঁজর ও অন্যান্য সবজির জমি। এতে স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
কৃষকেরা বলছেন, কার্তিক মাসের শুরুর দিকে আবহাওয়া ভাল থাকায় তারা জমিতে হালচাষ দিয়ে ফসল রোপণের প্রস্তুতি নেন। এরই মধ্যে জমিতে সরিষা, আলু, ফুলকপি, গাঁজর, মুলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে। পেঁয়াজের বীজতলাসহ মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন অনেকে।
কিন্তু হঠাৎ করে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত একটানা চলে এই বৃষ্টি। একই সঙ্গে ছিল হালকা বাতাস। এতে বিভিন্ন ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। জমিতে নুয়ে পড়েছে আধাপাকা আমন ধান। এরই মধ্যে মাঠের নিচু এলাকার আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
আজ শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমন ধানের খেতসহ কৃষকের সরিষা ও বিভিন্ন শীতকালিন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এলাকায় ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ এবং গত তিন বছরে একদিনে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কার্তিক মাসে সাধারণত হালকা বৃষ্টি হয়, তবে এ বছরের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক।
আরও পড়ুনঃ রাবি সুইমিংপুলে ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পর উদ্ধার করা হয় সায়মাকে
চলতি মৌসুমে মান্দা উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে স্বর্ণা-৫, ব্রি-৫১সহ বিভিন্ন জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। এছাড়া ৬০০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৬০ হেক্টরে ফুলকপি, ৮০ হেক্টরে আগাম আলু এবং ১৫০ হেক্টর জমিতে নানা শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে অন্তত ৫০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক অমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘২৫-৩০ বছরেও কার্তিক মাসে এত বৃষ্টি দেখিনি। প্রবল বৃষ্টিতে আমার কয়েক বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।’
পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, ‘ধান সবে পাকতে শুরু করেছিল। এখন গাছ নুয়ে পড়ে পানির নিচে গেছে। বোরোতে ক্ষতির পর এবারও লোকসান গুনতে হবে।’
উপজেলার হাজী গোবিন্দপুর, গাইহানা কৃষ্ণপুর, চককানু ও নবগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে আলু, ফুলকপি, পেঁয়াজ, ক্ষীরাসহ নানা সবজির খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু স্থানে পেঁয়াজের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, ‘হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে আমন ধান ও সবজি খেতের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

