দেশের পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক— ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে এবং খুব শিগগিরই নতুন গঠিত ব্যাংকের কার্যক্রম ‘টেক-অফ’ করা হবে। তবে এই ঘোষণার পর গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ, আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তা বেড়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মনে এখন প্রধান প্রশ্ন, তাদের টাকাগুলো নিরাপদ থাকবে কি না। আবার কেউ কেউ জানতে চাইছেন, সঞ্চয়ের টাকা কবে হাতে পাবেন। অন্যদিকে, ব্যাংক কর্মীদের দুশ্চিন্তা— তাদের চাকরি থাকবে তো?
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক গ্রাহক বলেন, ‘আমার এক লাখ টাকার চেক দুই মাস ধরে হাতে নিয়ে ঘুরছি, টাকা দিতে পারেনি শাখা।’ অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক বলছেন, ‘আমার জরুরি চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার, কয়েকবার শাখায় গিয়েও টাকা তুলতে পারিনি। একবার মাত্র ১০ হাজার টাকা দেওয়ার অনুমতি দিলো, এত কম টাকায়
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি খুব চাপের। প্রতিদিন গ্রাহকেরা এসে বকাঝকা করছেন। টাকা নেই, দেব কীভাবে? মার্জার হলে সরকার যদি তারল্য সহায়তা করে, তাহলে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারব।
বুধবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রাহকদের চাপ সামলাতে পারছি না। প্রতিদিন হাজারো ফোন আর অভিযোগের ঝড়। আমানতকারীদের টাকা দিতে না পারায় অনেক শাখায় উত্তেজনা দেখা দেয়। অফিসে কাজ করতে গিয়ে নিজেও অনিশ্চয়তায় আছি। কী যে হবে, কিছুই তো বুঝতেছি না।
ধোঁয়াশায় পাঁচ ইসলামী ব্যাংক
হতাশা নিয়ে শেষে বললেন, আমাদের চাকরি থাকে কি না তা-ও তো জানি না।
এক্সিম ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দায়িত্বটা এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে। অনিশ্চয়তার মাঝে কাজ করতে হচ্ছে। চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তায় আছে, কারণ প্রশাসনিক পরিবর্তন আসবে বলে শোনা যাচ্ছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা যোগ করেন, আমরা জানি সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রশাসক বসাবে; কিন্তু হাতে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। অফিসে বসে সবাই ভাবছে কী হবে আগামীকাল।
কেন এত সমস্যা
মূলত পাঁচটি ব্যাংকের ঋণ সমস্যার কারণে এই একীভূতিকরণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বর্তমানে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোটি কোটি টাকা, যার ফলে ব্যাংকগুলো তারল্যের অভাবে পড়েছে। তারা গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এতে গ্রাহকের বিশ্বাস ভঙ্গ হচ্ছে এবং ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চাকরি হারানোর ভয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।