১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৪৮:১১ পূর্বাহ্ন
নেপালের জেন-জি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ডের নাম জানা গেলো
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২৫
নেপালের জেন-জি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ডের নাম জানা গেলো

নেপালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের নেতৃত্বে পতন হয়েছে কেপি শর্মা অলির সরকারের। এখন সেই আন্দোলনের নেপথ্যের মূল নায়ক হিসেবে সামনে এসেছে এক অপ্রত্যাশিত নাম যিনি আগে ছিলেন একজন ডিজে, বর্তমানে ‘হামি নেপাল’ (আমরা নেপাল) নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৩৬ বছর বয়সী সুধন গুরুং।


গত সোমবারের বিক্ষোভে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭২ জন নিহত ও এক হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হয়। সাম্প্রতিক দশকে এটি ছিল নেপালের সবচেয়ে প্রাণঘাতী রাজনৈতিক সংকট।


তরুণদের সংগঠিত করতে গুরুংয়ের দল ভিপিএন ব্যবহার করে নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রবেশ করে। তারা ডিসকর্ড ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেয়, যা লাখো মানুষের কাছে পৌঁছায়। একজন ছাত্র জানিয়েছেন, ডিসকর্ডের একটি গ্রুপে তিনি আহ্বান পান সংসদের কাছাকাছি এলাকায় মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য। হামি নেপালের প্রথম পোস্টগুলো এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে সেগুলো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও উদ্ধৃত হয়।


বিক্ষোভ চলাকালে হামি নেপালের সদস্যরা গুজব শনাক্ত করে খণ্ডন করেছে এবং হাসপাতালে যোগাযোগের নম্বর ছড়িয়ে দিয়েছে, যা আহতদের চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক সহায়তা দেয়। এই কাজের মাধ্যমেই তাদের প্রভাব আরও সুদৃঢ় হয়।


আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও ১৮ বছরের শিক্ষার্থী কারান কুলুং রাই জানান, তাকে একটি ডিসকর্ড গ্রুপে আমন্ত্রণ জানানো হয় যেখানে প্রায় ৪০০ সদস্য ছিল। সেখান থেকেই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। হামি নেপালের প্রাথমিক পোস্টগুলো এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে সেগুলো জাতীয় টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়।


সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব গঠনে গুরুংয়ের সংগঠন সরাসরি ভূমিকা রাখতে শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানকে রাজি করিয়ে তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগে সহায়তা করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত কার্কি এখন নেপালের প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী।


তবে গুরুং ও তার সঙ্গীরা জানিয়েছেন, তারা কোনো মন্ত্রিসভায় যোগ দেবেন না। হামি নেপালের স্বেচ্ছাসেবক রোনেশ প্রধান বলেন, ‘আমরা রাজনীতিবিদ হতে চাই না। সুধন গুরুং কেবল জেন-জি আন্দোলনকে সহায়তা করেছেন। আমরা জাতির কণ্ঠস্বর, নেতৃত্বের পদে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।’


সুধন গুরুংয়ের নেতৃত্বে হামি নেপালের অনলাইন উপস্থিতি দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইনস্টাগ্রামে তাদের অনুসারীর সংখ্যা এক লাখ ষাট হাজার ছাড়িয়েছে। গুরুংয়ের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম ও ডিসকর্ডে সক্রিয় ছিলেন ২৪ বছর বয়সী ক্যাফে মালিক ওজাস্বি রাজ থাপা এবং আইন বিষয়ে স্নাতক রেহান রাজ দঙ্গল। বিশেষ করে থাপা দ্রুত আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে ওঠেন। তিনি বলেছেন, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অগ্রাধিকার।


তিনি আরও জানান, সংবিধানে কিছু সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে, তবে সংবিধান ভেঙে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।


সুধন গুরুংয়ের অতীতও তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে নয় হাজার মানুষের মৃত্যু হলে তিনি ত্রাণ কার্যক্রম সংগঠিত করেছিলেন। করোনা মহামারির সময়ও তার সংগঠন মাঠে কাজ করেছে।


আজকের নেপালে তাই এক প্রাক্তন ডিজে থেকে বিপ্লবীর যাত্রা শুধুই রাজনৈতিক পালাবদল নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের দিশা নির্দেশ করছে। গুরুংয়ের সহায়তায় শুরু হওয়া এই আন্দোলন শুধু একটি সরকার পতন ঘটায়নি, বরং নেপালের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছে।


শেয়ার করুন