যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা গ্রহণ করে রাজশাহীর শত শত যুব নারী-পুরুষ নিজেদের জীবন বদলে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন।
তাদের মধ্যে রিপা খাতুন একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ২০১৮ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তিন মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করার পর তিনি প্রায় ১ লাখ টাকা বিনিয়োগে একটি বুটিক ব্যবসা শুরু করেন। পরে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তিনি ৬০ হাজার টাকার প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পান। অতিরিক্ত উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের পর তিনি আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে ব্যবসা আরও বড় করেন।
বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিপা বলেন, ‘বর্তমানে আমার মূলধন প্রায় ৩৭ লাখ টাকা, ১২ জন কর্মী রয়েছে-যার মধ্যে তিনজন আমার পরিবারের সদস্য। আমার বার্ষিক নিট লাভ প্রায় ১০.২৫ লাখ টাকা।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক রিপা জানান, চাকরির পেছনে না ছুটে কীভাবে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি এখন মতিহার থানার মাসকাতাদিঘি এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে ‘রিপা বুটিক’ নামের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সেখানে থেকে ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্টের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ানপিস, টুপি, বেডশিট, কুশন কভার, শিশুদের পোশাক, কারুকার্য করা কাঁথা ও পাঞ্জাবি তৈরি ও বিক্রি করেন।
যুবকদের জন্য আরেকটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প পিয়ারুল ইসলামের, যিনি পবা উপজেলার বামনশিকার গ্রামের বাসিন্দা। পিয়ারুল মাছ, হাঁস-মুরগি ও দুগ্ধ খামারে সফল হয়ে একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার এখন ২২ বিঘা জমিতে মাছের খামার, ১৫ হাজার হাঁস-মুরগি, ১০টি গরু এবং পাশাপাশি ফলের বাগান রয়েছে। এনিয়ে মোট জমির পরিমাণ ২৫ বিঘা। আমার বার্ষিক নিট মুনাফা প্রায় ১.০৫ কোটি টাকা।’
গত অর্থবছরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে রাজশাহী জেলায় মোট ৫,৭২৬ জন যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৭২৯ জন যুবককে মোট ৩.৭৪ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে আরও ৯২৬ জন চাকরি পেয়েছেন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মাহবুব বলেন, ‘গত অর্থবছরে চাহিদাভিত্তিক আয়বর্ধক ব্যবসার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, উপজেলা ভিত্তিক যুব সম্পৃক্ততা আরও জোরদার করতে জেলায় ১২টি যুব সংগঠন নিবন্ধিত হয়েছে।
মাহবুব বলেন, ‘অনেক যুবককে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ উৎপাদন, গরু মোটাতাজাকরণ ও পশুপালনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সেলাই, ব্লক প্রিন্ট, বুটিক কাজ ও কম্পিউটার দক্ষতায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈচিত্র্যময় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে যুবসমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি, উপকারভোগীদের বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধ, নিরাপদ মাতৃত্ব ও স্যানিটেশন সচেতনতা এবং মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় উৎসাহিত করা হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে যুব সংগঠনগুলোকে গাছ লাগানো ও পরিচর্যায় উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত উপজেলা ভিত্তিক ও গ্রাম পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ গাছ রোপণ করা হয়েছে, যার মধ্যে গত অর্থবছরে রোপণ করা হয়েছে ২,৩০৫টি।
গোলাম মাহবুব বলেন, ‘যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও জামানতবিহীন ঋণ সহায়তার মাধ্যমে ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি জানান, ‘আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে সব স্তরে যুব ঋণ সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ তিনি সরকারের যুবকদের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতির কথাও তুলে ধরেন।
রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল আলম সরকার বাসসকে বলেন, ‘দেশের অগ্রগতি যুবকসমাজের শক্তির মাধ্যমে সম্ভব, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’
তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যুবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘জাতি গঠনের প্রয়াসে যুবকদের শক্তি ও সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’