০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার, ০৬:৫০:২১ অপরাহ্ন
আজ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বদরুদ্দীনের মরদেহ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৯-২০২৫
আজ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বদরুদ্দীনের মরদেহ

প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। শেষবারের মতো তাকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময়ের জন্য তার মরদেহ রাখা হবে।


জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।



 

তিনি জানান, বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


তার বড় মেয়ে বিদেশে রয়েছেন। তিনি ফেরার পর সোমবার বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা শেষে তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

গতকাল রবিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।


মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়িয়ে একজন লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ৯৪ বছর বয়সী বদরুদ্দীন উমর। তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও নানা প্রয়োজনে দক্ষতার সঙ্গে বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।


১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় প্রেসিডেন্সির বর্ধমান জেলার কাশিয়ারা গ্রামে এক বাঙালি মুসলিম জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করন।

২০২৫ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ছোট মেয়ে সারা আকতারই বদরুদ্দীন উমরের দেখাশোনা করতেন। লন্ডনপ্রবাসী বড় মেয়ের আজ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।



 

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের বাবা আবুল হাশিম ছিলেন এই অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তিনি অখণ্ড বাংলার পক্ষে কাজ করেছেন, মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। ১৯৫০ সালে তাঁরা ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন বদরুদ্দীন উমরের বাবা। পরে এই এই আন্দোলন নিয়ে উমর অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি, বিশ্লেষণ পদ্ধতি, কঠিন শ্রম দিয়ে গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেন।


তাঁর গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলনের ওপর সেই প্রথম গবেষণাগ্রন্থ ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ (তিন খণ্ডে), ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি’, ‘বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ’ এবং ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক’।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা প্রকল্পে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন বদরুদ্দীন উমর। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইন্স কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ও অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশে ফিরে পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হলে দর্শন বিভাগ ছেড়ে এই বিভাগের দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯৬৮ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত পার্টির মুখপত্র গণশক্তি সম্পাদনা করেন। বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট প্রভৃতি সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তিনি।


 

মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের অন্যতম অগ্রনায়ক, সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, বদরুদ্দীন উমর ছিলেন মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতি সংগ্রামের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ভাষা আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা, গবেষণা, ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক দর্শনের প্রতি তাঁর অবিচল নিষ্ঠা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের পরিবর্তনের জন্য গোড়া থেকেই গণ-অভ্যুত্থানের কথা বলেছেন। জুলাই আন্দোলনকে উপমহাদেশের একটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন।


শেয়ার করুন