দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশে ধর্ষণ বেড়েছে ৬৮.৪৫ শতাংশ। এ সময় শিশুদের প্রতি ৩৮ শতাংশ সহিংসতা বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল ভূমিকার কারণে এ ধরনের সহিংসতা থামছে না।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯২ জন। ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২৯২ জনে। অর্থাৎ গতবছরের একই সময়ের তুলনায় দেশে ধর্ষণের হার বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
একই সময়ে শিশুর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। আসকের তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম সাত মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছিল ৪৬৩ শিশু। চলতি বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ৩৮ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪০ জনে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম সাত মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৫৩ নারী ও শিশু।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ১০৫ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৮ জনকে। লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় পাঁচজন। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ১৩৭ জনকে। চলতি বছরের একই সময়ে ৪০৫ জন ধর্ষণের শিকার।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৭ জন। এ সময়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৫ জনকে। আত্মহনন করেছেন পাঁচজন। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ৭১ জনকে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। নারীবিরোধী প্রচার বেড়েছে। নারীবিদ্বেষ বাড়ছে। এসব কিছুর কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়েছে। অপরাধীরা ভাবছে—তারা কোনো সাজা পাবে না। সেজন্য দেশের এ ক্রান্তিলগ্নকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে অপরাধীরা।’
আসক ও মহিলা পরিষদের তুলনায় আরো ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫০২ জন। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৩৩ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর ২৭ জনকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণচেষ্টা করা হয় ২০৯ জনকে। গত বছরের একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয় ২৮৪ জন। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৯১ জন এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয় ১৬ জন। এছাড়া ১১৭ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, ‘দেশের পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে পুলিশ আগে যে সক্রিয় ভূমিকায় ছিল, জুলাই আন্দোলনে বাহিনীটি বিতর্কিত হওয়ার পর আর সেই ভূমিকায় ফেরেনি। তবে এটিই মূল কারণ নয়। জুলাই আন্দোলনের পর নারীদের স্বাধীনতা, অধিকার, বাইরে যাওয়া নিয়ে এক ধরনের বয়ান তৈরি করা হয়েছে। এতে নীরবে ধর্ষকদের একধরনের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।’
সূত্র: বণিক বার্তা।