২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ০৬:৪৮:২০ অপরাহ্ন
ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’ নিয়ে ট্রাম্পের পোস্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২৫
ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’ নিয়ে ট্রাম্পের পোস্ট

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার এক দিন পর দেশটিতে সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘ইরানের বর্তমান সরকার যদি দেশটিকে আবার মহান করতে অক্ষম হয়, তাহলে সেখানে সরকার পরিবর্তন হবে না কেন?’


অন্যদিকে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত অযৌক্তিক অজুহাত তৈরি করে ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হরমুজ প্রণালি বন্ধ না করতে ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বিশ্বজুড়ে মার্কিন নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।


এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা গতকালও অব্যাহত ছিল। এর জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে।


সরকার পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্পের পোস্ট

ইরানের সরকার পরিবর্তন বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘সরকার পরিবর্তন টার্মটার ব্যবহার রাজনৈতিকভাবে সঠিক নয়।


কিন্তু যদি ইরানের বর্তমান সরকার ইরানকে আবার মহান করতে অক্ষম হয়, তাহলে কেন সেখানে সরকার পরিবর্তন হবে না?’

এর আগে সকালেই তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটে হেগসেথ বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানটি সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে ছিল না। আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির শেষ দেখতে চেয়েছি।’


ইরানের সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের মধ্যেই একটি বিতর্কের বিষয়। এর আগে সবশেষ রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকে মানববিধ্বংসী মারণাস্ত্র থাকার অভিযোগ করে সরকার পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছিলেন।


পরে ওই অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হয়েছিল।

সরকার পরিবর্তন ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে রিপাবলিকানদের বড় অংশের মধ্যেই আপত্তি আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বুশ যুগের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা শুধু দেশটির পররাষ্ট্রনীতির বিষয় নয় বরং এর মাধ্যমে ট্রাম্পকে তার অভ্যন্তরীণ হিসাব-নিকাশের ভারসাম্য করতে হয়েছে।

 

জাতিসংঘে কূটনীতিকরা যা বলেছেন

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়া নিয়ে জাতিসংঘে কূটনীতিকদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে গত কয়েক ঘণ্টায়।


রবিবার রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে অনুরোধ করেছে।

বিতর্কে অংশ নিয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, ইরানে হামলার জন্য পুরো বিশ্বের উচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দেওয়া। তিনি অভিযোগ করেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনা একটি নাটকে পরিণত হয়েছিল।


ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাইয়েদ ইরাভানি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভুয়া অজুহাত তৈরি করে ওয়াশিংটন ওই হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেছেন, বেইজিং ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা করছে।


রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে দিয়েছে এবং ‘ওয়াশিংটন মোটেই কূটনীতিতে আগ্রহী নয়’।


জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আরেকটি ধ্বংস চক্রের অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন।


তেলের দাম বাড়ছে

এদিকে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। অপরিশোধিত তেলের দাম কমপক্ষে তিন শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৯ মার্কিন ডলার হয়েছে।


মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত শুরুর পরপরই তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কারণ অনেকেই মনে করছেন, তেল সরবরাহ চেইনে সংকট হতে পারে।



 

পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে

ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে সাইরেন বাজানো হচ্ছে। হামলার পর আবার কখন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বের হতে পারবে তা জানিয়ে দেয় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।


গত কয়েক দিনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি এসব হামলা চলছে। রবিবারও তেল আবিবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। আবাসিক এলাকার ভবন এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


দুই দফায় ইরান অন্তত ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র এদিন নিক্ষেপ করেছে। এগুলো ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থল ছাড়াও হাইফা, নেস জিওনা ও রিশন লেজিওন এলাকায় আঘাত হেনেছে।


অন্যদিকে ইসরায়েল তেহরান, কেরমানশাহ ও হামাদানে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র মজুদাগার ও উৎক্ষেপণস্থল, রাডার ও উপগ্রহ সিস্টেম এবং ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারে হামলা করেছে বলে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


শেয়ার করুন