১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৪:৪৫:৫৬ অপরাহ্ন
রাজশাহী বিভাগে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, আতঙ্কে জনতা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৬-২০২৫
রাজশাহী বিভাগে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, আতঙ্কে  জনতা

রাজশাহী বিভাগজুড়ে থামছে না চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা। অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মামলার সংখ্যাও। তবে অধিকাংশ অপরাধীরই হদিস মিলছে না- এতেই উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পুলিশ বলছে, তারা সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই রাজশাহী বিভাগে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির অন্তত ৩৯০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে চুরির মামলা ২৮৪টি, ডাকাতি ২৯টি। সবচেয়ে বেশি ৫৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছে বগুড়ায়।


গত ৬ জুন ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে এসে দেবিসিংপাড়ায় ছিনতাইয়ের শিকার হন ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান শাখার কর্মকর্তা রাশিদুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাহমিদা সুলতানা। বাস থেকে নামার পর বাড়ির সামনে রিকশায় বসা অবস্থায় ছিনতাইকারীরা তাদের গতিরোধ করে। ধারালো অস্ত্রের মুখে দুটি মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় তারা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।


গত ৮ এপ্রিল রাতে বাঘার দিঘা আঠালিয়াপাড়ায় পুলিশের এএসআই আশরাফুল আসেকিন রিপনের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরেরা স্বর্ণের বালা, লকেট ও রুপার তোড়া নিয়ে যায়। রিপনের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। অভিযোগ থাকলেও মামলা হয়নি, হয়েছে শুধু একটি জিডি।


ওসি আসাদুজ্জামান জানান, “ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য নিজেই মামলা করতে চাননি, তাই এখন পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।”


এছাড়াও গত সোমবার ১৬ জুন ভোরে রাজশাহীর তানোরে গোল্লাপাড়া বাজারে ৫টি দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা ঘটেছে। একই মার্কেটের পাঁচটি দোকানের ক্যাশ থেকে চোরের দল চুরি করে নিয়ে গেছে নগদ প্রায় ৪ লাখ ৩২ হাজার ৫শ’ টাকা। তবে, কোন মালামাল চুরি হয়নি। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।


তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবজাল হোসেন বলেন, ‌‘‘তালা না ভেঙে দোকানের সাটার বাঁকিয়ে চোরেরা চুরি করেছে। ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদ।’’


তিনি আরও বলেন, ‌‘‘সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’’


রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, “পুলিশ নিজেরা অভিযান কমিয়ে দিয়েছে, সেনাবাহিনীর সহায়তা ছাড়া অভিযান করছে না। রাজনৈতিক ইন্ধন ও পুলিশের দুর্বলতায় অপরাধ বাড়ছে। এখনই অভিযান জোরদার না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনার পর প্রশাসনে নিষ্ক্রিয়তা এসেছে। বিচার ব্যবস্থা দুর্বল, রাজনৈতিক প্রভাব আছে- এসব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।”


পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “অপরাধ নির্মূল নয়, নিয়ন্ত্রণই সম্ভব। আমরা প্রতিটি অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।”

শেয়ার করুন