২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৭:৩০ অপরাহ্ন
বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় বিস্ফোরিত হলো স্পেসএক্সের ‘স্টারশিপ’
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২৫
বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় বিস্ফোরিত হলো স্পেসএক্সের ‘স্টারশিপ’

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রকেট হিসেবে পরিচিত স্পেসএক্সের ‘স্টারশিপ’ সফলভাবে মহাকাশে পৌঁছালেও পৃথিবীতে ফেরার পথে বায়ুমণ্ডলের প্রচণ্ড তাপে ধ্বংস হয়ে গেছে। রকেটটির ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে, জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে অনেক দূরে।


যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের স্টারবেইস ঘাঁটি থেকে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৩৭ মিনিট) নবমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় স্টারশিপ রকেট। এ উৎক্ষেপণ সরাসরি সম্প্রচার করে স্পেসএক্স।


‘স্টারশিপ’ দুই স্তরবিশিষ্ট একটি রকেট, যার নিচের অংশে রয়েছে ‘সুপার হেভি বুস্টার’ নামের ৩৩টি ইঞ্জিনচালিত বুস্টার, আর উপরের অংশটি হলো মহাকাশযান ‘স্টারশিপ’। নাসার আর্টেমিস রকেটের তুলনায় এটি দ্বিগুণ শক্তিশালী। ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন স্পেসএক্স এই প্রকল্পের মাধ্যমে মঙ্গল অভিযানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।


স্পেসএক্স জানায়, উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরই রকেটের প্রোপেলান্ট সিস্টেমে লিক ধরা পড়ে, যার কারণে রকেটটি আকাশে ঘূর্ণায়মান হয়ে পড়ে। তবুও স্টারশিপের মূল যাত্রীবাহী অংশটি তখনও অক্ষত ছিল। তবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় প্রচণ্ড ঘর্ষণজনিত তাপে সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।


নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এই উৎক্ষেপণকে 'এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ ও উন্নত পরীক্ষা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এটি সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারেনি, তারপরও রকেটটি উৎক্ষেপণের সময় বিস্ফোরিত না হওয়া ও আংশিক কিছু সফলতা প্রকল্পটির জন্য অগ্রগতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।


এই ফ্লাইটে স্টারলিংকের নতুন প্রজন্মের স্যাটেলাইট সিমুলেটর মহাকাশে স্থাপন, হিট শিল্ডের কার্যকারিতা যাচাইসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করার কথা ছিল। কিন্তু পেলোড ডোর না খোলায় সেই পরীক্ষা সম্ভব হয়নি।


তবে, স্পেসএক্স বলছে, এটি ছিল মূলত পরীক্ষামূলক মিশন এবং বারবার পরীক্ষা চালিয়েই তারা রকেটটির ডিজাইন ও কার্যকারিতা উন্নত করবে। প্রতিষ্ঠানের ভাষায়, 'প্রতিটি উৎক্ষেপণ আমাদের শেখার নতুন সুযোগ তৈরি করে। প্রতিটি ব্যর্থতা ভবিষ্যতের সফলতার ভিত্তি।'


এবারের মিশনে ব্যবহৃত বুস্টারটি পূর্বে আরেকটি ফ্লাইটে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি পুনঃব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির দিক থেকে একটি বড় উন্নয়ন হলেও, ফেরার পথে তিনটি ইঞ্জিন ব্যবহার করে অবতরণের সময় এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উপসাগরীয় এলাকায় ভেঙে পড়ে।


গত মার্চে স্টারশিপের আগের ফ্লাইট উৎক্ষেপণের ১০ মিনিটের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়েছিল, যার ফলে ফ্লোরিডা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের আকাশপথে সাময়িকভাবে বিমান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। ওই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) তদন্ত শুরু করে, যা সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এরপরই স্পেসএক্সকে নতুন স্টারশিপ উৎক্ষেপণের অনুমতি দেওয়া হয়।


নতুন সংস্করণের স্টারশিপে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল, যেন এটি আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে ও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তবুও, এই মিশন প্রমাণ করেছে— এখনো অনেক কাজ বাকি। তবে, স্পেসএক্সের প্রত্যয়, 'আমরা যত দ্রুত রকেট উৎক্ষেপণ ও পরীক্ষা চালাতে পারব, তত দ্রুতই স্টারশিপকে একটি পূর্ণাঙ্গ পুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযানে রূপান্তর করতে পারব।'


সেই পথ হয়তো দীর্ঘ, তবে প্রযুক্তিগত অভিযাত্রায় এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


শেয়ার করুন