১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ০৫:২০:১৬ অপরাহ্ন
আজ নগর ভবন ‘ব্লকেডের’ ডাক ইশরাক সমর্থকদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২৫
আজ নগর ভবন ‘ব্লকেডের’ ডাক ইশরাক সমর্থকদের

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো পর্যন্ত নগর ভবনের ফটক খুলবে না—এমন ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর সমর্থকরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিনে গতকাল রবিবার নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।


আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে অবস্থান করবেন আন্দোলনকারীরা। সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মশিউর রহমান জানান, ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে এই কর্মসূচি চালানো হবে।


এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলেছে, নগর ভবনের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলেও জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।


 ‘তালা খুলবে না, শপথ না দিলে’


বিক্ষোভকারীরা বলছেন, আদালতের রায়ে বৈধভাবে নির্বাচিত হয়েও ইশরাক শপথ নিতে পারছেন না—এটা আদালত ও ভোটারদের অপমান। ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নিজেই যদি আদালতের রায় না মানে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?’


এ সময় ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের, শপথ চাই, দিতে হবে’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।


এর আগে শনিবার আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। দাবি, যত দিনে শপথ না দেওয়া হবে, তালাও খুলবে না। শনিবার তারা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীবকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। রবিবার তাঁকে পদত্যাগের আহবান জানান।


 


ইশরাকের বক্তব্য : আন্দোলন ঠেকাব না, জনদুর্ভোগও চাই না


শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এই আন্দোলনের ঘোষণা বা নির্দেশ আমি দিইনি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা যাতে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে, সে অনুরোধ আমি করব।’


ইশরাক হোসেন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আন্দোলন করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আমি সেই অধিকার কেড়ে নিতে পারি না।’


 


রায় ও গেজেট ঘিরে আইনি জটিলতা


২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হন।


তবে ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়ে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে।

কিন্তু ওই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। ৮১৩৭/২০২৫ নম্বর রিটে তিনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট বাতিল চেয়ে আবেদন করেন এবং একই সঙ্গে শপথ অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে সরকারকে অনুরোধ জানান।


এই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শপথ গ্রহণ কার্যক্রম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ১৫ মে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও চেয়ে পাঠানো হয়েছে।


 


সরকারের অবস্থান : আইনি নির্দেশনার অপেক্ষা


স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আন্দোলনের ফলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে মন্ত্রণালয়। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রিট বিচারাধীন থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়া আইনি অনাস্থার শামিল হতে পারে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।


এ ছাড়া ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট সংশোধিত সিটি করপোরেশন আইনে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করার পর ১৯ আগস্ট তৎকালীন মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।


 


সরকারের আহবান : আদালতের ওপর আস্থা রাখুন


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচারাধীন মামলার পটভূমিতে নাগরিক সেবা ব্যাহতকারী আন্দোলন আদালতের প্রতি অনাস্থা বা অবমাননার শামিল হতে পারে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের প্রতি নাগরিক সেবা সচল রাখতে আন্দোলন থেকে সরে আসার আহবান জানানো হয়েছে।


শেয়ার করুন