৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৮:৫০:১৪ অপরাহ্ন
দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রানীতির প্রভাব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২৪
দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রানীতির প্রভাব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হবে

সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বা বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও কমে আসবে। এতে বেসরকারি খাত প্রসারে ক্ষতি এবং নতুন বিনিয়োগ বাধাপ্রাপ্ত হবে। নতুন শিল্প স্থাপনের গতি মুখ থুবড়ে পড়বে। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের গতি যেমন কমবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চলমান কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো। 

ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে শিল্প ও ব্যবসার খরচ লাগামহীনভাবে বাড়তেই থাকবে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি বাণিজ্যও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এতে ডলারের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সব মিলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের গতি হ্রাস পাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখতে হবে। 

এদিকে আইএমএফও বলেছে, আগামী অর্থবছরেও এ নীতি চালু রাখতে। দুই অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি চালুর ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ নীতি চালু রাখলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও কম হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমায় দাম বেড়ে যায়। এতে বাংলাদেশ বেশি দামে পণ্য আমদানির কারণে একদিকে ব্যয় বেড়ে যায়, অন্যদিকে দেশের বাজারে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পায়। আমদানি করতে ডলার খরচ বেশি হওয়ায় রিজার্ভে টান পড়ে। ফলে ডলারের দামও বাড়তে থাকে। এতে আমদানি ব্যয় আরও বৃদ্ধি পায়। আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশীয় পণ্যের দামও বাড়ে। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়, তেমনি বাংলাদেশেও বাড়তে থাকে। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ২০২২ সালের জুন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ শুরু করে। পুরো ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি চলে। কিন্তু সুদের হার বেশি বাড়ায়নি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে সংস্থাটি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিকে ব্যবহারের কথা বলে। অর্থাৎ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে ব্যয়বহুল করে তোলে। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমবে। ফলে চাহিদা কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতির হারও কমে যাবে। এই নীতি অনুসরণ করে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার দেশগুলো ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু বাংলাদেশে আসেনি। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির মিল নেই। ওইসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার বাড়িয়ে বাজারে ঋণের সুদ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলে দুই সপ্তাহের মধ্যে তা বেড়ে যায়। বাংলাদেশে নীতি সুদের হার বাড়িয়ে ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলে এক বছরেও তা বাড়ে না। কারণ, মুদ্রানীতির উপকরণগুলোর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর নিবিড় সম্পর্ক নেই বা নির্ভরতা নেই। যে কারণে বাজারে নীতি সুদহার বাড়ানোর প্রভাব পড়ে না। ইউরোপ-আমেরিকায় একদিন বা এক সপ্তাহ মেয়াদি ঋণও আছে। ফলে সুদহার বাড়ানো সহজ হয়। বাংলাদেশে এসব নেই। ফলে দ্রুত সুদ বাড়ানো সম্ভব নয়। 

শেয়ার করুন