২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৪:৪৩:৩৪ অপরাহ্ন
ভয়াবহ যানজটের শঙ্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
ভয়াবহ যানজটের শঙ্কা

ভাঙাচোরা ও সরু সড়ক, সড়ক সম্প্রসারণ ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ঈদযাত্রায় বাড়িফেরা মানুষের এবারও যানজটের ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে-এমন শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় শ্লথ হয়ে পড়ে সেতু ও সড়কের টোল আদায়, অনেক সময় সড়কে গাড়ি অকেজো হয়ে পড়ে এবং একত্রে অনেক মানুষ সড়কে নেমে পড়ে-এতে সড়ক ও মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব কারণ চিহ্নিত, বছরের পর বছর সরকারের বিভিন্ন স্তরের নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে আলোচনা হয়, সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু সমাধান হয় না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রতিবছর আনন্দের ঈদযাত্রা দুর্ভোগে পরিণত হয়।


সড়ক ও পরিবহণ খাত সংশ্লিষ্টদের আরও অভিমত-ঈদের আগে ছুটি কম হওয়ায় একসঙ্গে অনেক মানুষ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে রওয়ানা হবেন। সেসময় সড়ক ও মহাসড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে সরকারকে ভাবতে হবে। সরকারি যে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, ঈদের আগে আরও দুদিন ছুটি বাড়ানো দরকার। তাহলে মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন। পাশাপাশি গার্মেন্টস সেক্টরে আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ এবং ভাগে ভাগে শ্রমিকদের ঈদের ছুটিতে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে যানজট অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে উত্তরবঙ্গ এলাকার সড়ক-মহাসড়কে। কেননা এবার এই অঞ্চলে যানজটের শঙ্কা বেশি।


তারা জানান, এ বছর ১২ মার্চ রোজা শুরু হয়েছে। আর পবিত্র ঈদুল ফিতর নির্ভর করে চাঁদ দেখার ওপর। তবে ইতোমধ্যে ঈদের জন্য ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল সম্ভাব্য ছুটির তারিখ নির্ধারণ করা আছে। এভাবে হলে ঈদের পরদিন ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এরপরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। এদিনও সরকারি ছুটি অর্থাৎ ঈদুল ফিতরে ৫ দিন ছুটি নিশ্চিত হয়ে আছে। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৮ ও ৯ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করার বিষয়ে ভাবতে হবে।


জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সড়ক ও মহাসড়কে যানজট স্পটগুলোর বেহাল। সরকার যানজট স্পটের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, বাস্তব অবস্থা তার চেয়েও অনেক বেশি। সেসব স্পট ব্যবস্থাপনা করতে সরকার প্রতিবছর ব্যর্থ হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।


তিনি বলেন, ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে সড়ক ও মহাসড়কে বাড়িফেরা মানুষের বহন করা গাড়ি স্থবির হয়ে পড়বে। অন্তত ঈদের আগে দুদিন ছুটি বাড়ানো দরকার। এতে মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে এবং অনেক দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচানো যাবে। তিনি জানান, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ইতোমধ্যে বলেছে ডলার সংকটের কারণে তাদের পাওনা বায়াররা সঠিকভাবে পরিশোধ করছেন না। এজন্য ঈদের আগে মালিকদের পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা কঠিন হবে। এটা হলে যদি তারা সড়ক অবরোধ করে তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে ভাগে ভাগে শ্রমিকদের ছুটির সিদ্ধান্ত কার্যকরে সরকার সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় থাকতে হবে।


যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক যুগান্তরকে বলেন, একসঙ্গে অনেক মানুষ সড়কে নেমে পড়লে সরকারের কোনো ব্যবস্থাপনায় কাজ হবে না। এজন্য আগে থেকে ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো দেখভাল করতে হবে। তবে টেকসই চলাচল নিশ্চিত করতে হলে ধাপে ধাপে সরকারকে ট্রেনের দিকে ঝুঁকতে হবে। এছাড়া এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দ্রুতগতির ট্রেনের চলাচল যতটা স্বস্তিদায়ক করতে পারে, তা অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়।


বিশেষ তদারকি ১৫৫ স্পটে : সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ১৫৫টি যানজটের বড় স্পট চিহ্নিত করেছে। এ তালিকায় রয়েছে-ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২টি, ঢাকা সিলেট মহাসড়কে ৪১টি, ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে ৮টি এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬টি। এসব যানজট স্পটের বিশেষ তদারকি করতে সমন্বয় সভা করে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিবছর এমন সভা হয় ও নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঈদের আগে সবাই তৎপর হলেও ঈদের পরে তারা ঢিল দেন। এতে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়িফেরা মানুষের চলাচল স্বস্তিদায়ক করতে সেসব বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


তারা বলেন, ঈদযাত্রার যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আন্তঃসংস্থার সভায় সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো সংশ্লিষ্টদের কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেগুলো হলো-আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগের ৩ দিন ও পরের ৩ দিন মহাসড়কে ট্রাক, ক্যাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টসসামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি সরবরাহকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে। ঈদের দিনসহ আগের ৭ দিন এবং পরের ৫ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখতে হবে। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প-কলকারখানার শ্রমিকদের একত্রে ছুটি না দিয়ে ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জাতীয় মহাসড়ক ও করিডরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ঈদের ৭ দিন আগেই শেষ করা। সারা দেশের মহাসড়কের চিহ্নিত ১৫৫টি যানজট স্পট ঈদের আগে ও পরে নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় আনা। পণ্য পরিবহণ যানবাহনে ঈদের সময় কোনো যাত্রী পরিবহণ করা যাবে না এবং নির্দিষ্ট ২২টি সড়ক ও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ করা।


কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী যুগান্তরকে বলেন, আন্তঃসংস্থার সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা সমন্বিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।


২১ মার্চ আন্তঃসংস্থার সমন্বয় সভায় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ঈদযাত্রায় যানজট হবে। একেবারে যানজটমুক্ত করা সম্ভব হবে না। তবে পরিস্থিতি যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে।


শেয়ার করুন