২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:২৯:৪৭ অপরাহ্ন
বিদেশে যাচ্ছে রংপুরের ২০ ধরনের কৃষিপণ্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৩-২০২৪
বিদেশে যাচ্ছে রংপুরের ২০ ধরনের কৃষিপণ্য

রংপুর বিভাগের বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার চরাঞ্চলে বছরে ২০ ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। শ্রীলংকা, জাপান, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চরের ফসল রপ্তানি হচ্ছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির চাকা গতিশীল হচ্ছে। ফসল বিদেশে রপ্তানি করে চরের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।


স্থানীয়দের দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব জমি বহুমুখীকরণ করে ফসল উৎপাদন করলে কৃষক পরিবারগুলো আরও উপকৃত হবে। শুধু তাই নয়, ফসলের আন্তর্জাতিক গুণগতমান রক্ষা করা যাবে। চরাঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, নদীশাসন পরিকল্পিতভাবে করা গেলে চরাঞ্চলের জমিতে বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তারা জানান, এখনো চরাঞ্চলের প্রায় ৪০ ভাগ জমি পতিত রয়েছে। এছাড়া জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা নিরসন হলে উৎপাদন আরও বাড়বে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফসল দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে।


রংপুর ও লালমনিরহাটের চরে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। আর গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মিষ্টি আলু যাচ্ছে জাপানে।


রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি চর চল্লিশসালর চরের কৃষক জমশের শেখ বলেন, তিনি চরের জমিতে ফসল উৎপাদন করছেন এবং বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল বিদেশে রপ্তানি করছেন। এসএকেএস চর, গজঘণ্টার ছালাপাক, মর্ণেয়া, তালতলা, কোলকোন্দচর, কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পল্লীমারি, চর নাজিরাদহ, প্রাণনাথচর, বালাপাড়ার গদাই, হরিশ্বর, কালীরহাট টেপামধুপুরের আজম খাঁ, চরগনাই, বুড়িরহাট ও পীরগাছা উপজেলার ছাওলার চর হাসিমসহ বিভিন্ন এলাকায় চরে গিয়ে দেখা গেছে, চরের জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।


ছাওলার চরের বাসিন্দা কৃষক হামে আলী বলেন, তারা এখন আধুনিক চাষাবাদের মধ্য দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন।


কৃষকরা বলছেন, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার চরের জমিতে ভালো ফসল উৎপাদন হয়। এখানকার শাক-সবজিতে কীটনাশক দিতে হয় না। তাদের ভাস্যমতে অনেক পোকামাকড় চরের জমিতে বেশি উত্তাপ ও শুষ্ক থাকায় বসবাস করতে পারে না। তাই তারা কীটনাশক ব্যবহার করেন না। সেজন্য দেশে চরের জমির ফসলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।


চর মিলনের কৃষক জহুরুল বলেন, চরে এখন ভুট্টা, আলু, মিষ্টি কুমড়া, শসা, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, তিশি, তিল, ধানসহ ২০ রকমের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি গবেষণার এক তথ্যে জানা গেছে, দেশে ৩২ জেলার ১০০ উপজেলার চরে এক কোটি মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে ১০ লাখ মানুষের বসবাস। বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রায় ৬শ চরের এক লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। শুধু দেশীয় চাহিদাই নয়, চরের উৎপাদিত ফসল জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব বাজারেও।


রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হচ্ছে উত্তরের চরগুলোতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভাগের বিভিন্ন চর থেকে উৎপাদিত প্রায় ১৫ হাজার টন মিষ্টি কুমড়া, আলু ও মিষ্টি আলু রপ্তানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, জাপান ও ভুটানে। তিনি বলেন, রংপুর ও লালমনিরহাট থেকে মিষ্টি কুমরা মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয়। গাইবান্ধার চরাঞ্চলের মিষ্টি আলু জাপানে যায়।


এদিকে সরকার ও সুইজারল্যান্ডের অর্থায়নে মেকিং মার্কেটস ওয়ার্ক ফর দি চরস, এমফোরসি প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর বিভাগের চার জেলাসহ মোট ছয়টি জেলায় বসবাসরত চরাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ১০ বছর মেয়াদের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। উদ্দেশ্য, প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী মানুষের আয় বৃদ্ধি করা। রংপুরের তিস্তা নদী শাসন করা গেলে অনেক বেশি চরকে উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।


শেয়ার করুন