২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৩:১১:৫১ পূর্বাহ্ন
দ্রুত কার্যকরে মিলবে সুফল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৩-২০২৪
দ্রুত কার্যকরে মিলবে সুফল

জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত সমন্বয় করতে পারলে জনগণ সুফল পাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, আপাতত জনজীবনে এর তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ এবং দ্রুত তা সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারলে জনগণ সুফল পাবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরপরই গণপরিবহনের ভাড়াসহ সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যায় দ্রুত। কিন্ত জ¦ালানি তেলের দাম কমালে তার প্রভাব তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি আগের দাম বহাল রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে ব্যবসায়ীসহ সব পর্যায়ে। ইতোপূর্বে যে হারে দাম বাড়ানো হয়েছে এবারো তার তুলনায় নামমাত্র কমানো হয়েছে। এ কারণে আগে বেশি বেড়ে যাওয়া পণ্যের দাম কমাতে খুব একটা ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে কারো কারো সন্দেহ, বাজারে এর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে যতটা তৎপর, দাম কমানোর ক্ষেত্রে ততই গড়িমসি করেন। এর পাশাপাশি তেলের দাম কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের প্রতি আইএমএফএর চাপও বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণে সরকারও রয়েছে সীমাবদ্ধতায় মধ্যে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৭৫ পয়সা থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেয় আইএমএফ। তখন থেকেই সরকার নীতিমালা তৈরির পথে হাঁটছে। বর্তমানে যে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তা জনজীবনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এছাড়া সরকারের দাম কমানোর সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আরো আগেই জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। এখানেও তেলের দাম কমাতে পারত, কিন্তু সেটা তারা করেনি। দেরিতে হলেও এ ধরনের প্রক্রিয়ায় আসাটা জরুরি ছিল। তবে যে হারে তেলের দাম কমানো হয়েছে, তাতে এখনই জনজীবনে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না। কারণ গণপরিবহনে ডিজেলের ব্যবহার বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ গণপরিবহনে চলাচল করে। ডিজেলের দাম ৭৫ পয়সা কমেছে। তিনি বলেন, গণপরিবহনের পাশাপাশি সেচ কাজে ডিজেলের ব্যবহার বেশি হয়। যে হারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হচ্ছে- সেই অনুযায়ী যানবাহনের ভাড়া কতটুকু কমবে এবং সেটা কবে বাস্তবায়ন হবে- এ নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ এবং দ্রুত তা সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে পারলে জনগণ সুফল পাবে।

এদিকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জ্বালানি তেলের সর্বশেষ মূল্য সমন্বয় (২০২২ সালের ২৯ আগস্ট) পরবর্তী সময়ে কোভিড মহামারি-উত্তর সরবরাহ সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রপথে জ্বালানি পণ্যের প্রিমিয়াম, পরিবহন ভাড়া, বিমা এবং ব্যাংক সুদের হারও ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। উল্লিখিত সময়ে শুধু মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা অবমূল্যায়িত হয়েছে এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের (প্রধানত ডিজেল) দামে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাইসিং ফর্মুলা বা গাইডলাইনের আলোকে


ডিজেল ও কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন ফর্মুলা অনুযায়ী, প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৭৫ পয়সা কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকায়। প্রতি লিটার অকটেনের দাম ৪ টাকা কমিয়ে ১২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর ৩ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২২ টাকা। বর্তমানে প্রতি লিটার পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়।

ফর্মুলা বা গাইডলাইন অনুসারে এখন থেকে প্রতি মাসেই জ্বালানি তেলের আমদানি বা ক্রয়মূল্যের আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি। এ কারণে মূল্যস্ফীতিও কমবে না। সরকারের ভর্তুকি খরচ হয়তো কিছুটা কমবে। জ্বালানির দাম কাক্সিক্ষত পরিমাণে না কমায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপন বা টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ বেড়ে যেতে পারে। সময়মতো উদ্যোগ না নেয়ার খেসারত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার মতো হয়েছে। আগের মতোই কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন খরচ বাড়বে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। এতে দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা ও বৈষম্য বাড়বে। কমবে শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় ঠিকভাবে হয়নি। বিশেষ করে ডিজেলের ক্ষেত্রে। সরকারের উচিত ছিল বেশি পরিমাণে ডিজেলের দাম কমানো। কিন্তু সেটা আমরা দেখতে পাইনি।


শেয়ার করুন