২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:২৭:৫০ অপরাহ্ন
৪৬তম বিসিএসের আবেদনে ভাটা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২৩
৪৬তম বিসিএসের আবেদনে ভাটা

গত ১৭ দিনে ৪৬তম বিসিএসে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার প্রার্থী। ৪৫তম বিসিএসে আবেদন পড়েছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার। এবার সেই তুলনায় আবেদন কম পড়েছে। এমনকি গত সাতটি সাধারণ বিসিএসের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন আবেদনের হার। হরতাল, অবরোধ ও জাতীয় নির্বাচনসহ নানা কারণে এবার আবেদন কম পড়ছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক বা সম্মান কিংবা সমমানের পড়াশোনা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেননি। ফলে আবেদনে সাড়া কম। যদিও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ আছে।


এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কোনো শিক্ষার্থী অনার্স শেষ করতে না পারলে আমাদের কিছু করার নেই। তারা পরবর্তী বিসিএসে আবেদন করবে। এই আবেদনের সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না।


বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছিল আরাফাত নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি যুগান্তরকে জানান, এই ডিসেম্বরে আমাদের অনার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল। হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের মিডটার্ম পরীক্ষা ও ক্লাস পিছিয়েছে। এই মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচনের পরে। ফলে অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে জানুয়ারি শেষের দিকে। এতে করে ইচ্ছে ও প্রস্তুতি থাকার সত্ত্বেও ৪৬তম বিসিএসে আবেদন করতে পারছি না। হরতাল ও অবরোধের বিষয় বিবেচনা করে এই আবেদনের সময় পেছানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। ৩০ নভেম্বর সর্বোচ্চ পদ নিয়ে ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (বিপিএসসি)। বিগত ১০টি বিসিএসের মধ্যে ৪৬তম বিসিএসে সবচেয়ে বেশি ক্যাডার পদের চাহিদা রয়েছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে বিসিএসের আবেদনের কার্যক্রম শুরু হয়। যা চলবে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।


জানা গেছে, এই পর্যন্ত আবেদন করেছেন মাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৮ প্রার্থী। পিএসসির গত সাতটি সাধারণ বিসিএসের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম আবেদন জমা পড়েছে ৪৬তম বিসিএসে। এর আগে ৪৫তম বিসিএসে আবেদনকারীর সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার। যা গত বিসিএসের আবেদনকারীদের অর্ধেকের চেয়েও কম। আবেদনের সময় বাকি আছে মাত্র ৩ দিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রার্থীরা যা আবেদন করার আগেই করে ফেলছে। এই অল্প কয়কেদিনে খুব বেশি আবেদন আসবে না। ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, যেসব প্রার্থী আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের মধ্যে তাদের গ্র্যাজুয়েশনের সর্বশেষ পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে তারাই শুধু এ বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এসব পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। ৪৬তম বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৪৬তম বিসিএসে মোট পদসংখ্যা ৩ হাজার ১৪০টি। এর মধ্যে সাধারণ ক্যাডার রয়েছে ৪৮৯টি, টেকনিক্যাল ক্যাডার ২ হাজার ৭৪টি, শিক্ষা ক্যাডারে ৫৭৭টি। এবার সাধারণ ক্যাডারের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রশাসন ক্যাডার রয়েছে ২৭৪টি। এছাড়া পররাষ্ট্র ১০টি, পুলিশে ৮০টি, আনসারে ১৪টি, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৪টি, কর ৩৮টি, শুল্ক ও আবগারি ৬টি, সমবায়ে ৭টি, রেলওয়েতে ২টি, তথ্যে ১১টি, ডাক ৪টি, পরিবার পরিকল্পনা ১৫টি, খাদ্য ক্যাডারে ২ জন নেওয়া হবে। বর্তমানে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার পিএসসি ৪৩তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে।


বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের যোগ্যতায় বলা হয়েছে, যদি কোনো প্রার্থী এমন কোনো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে থাকেন, যে পরীক্ষায় পাশ করলে তিনি ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা ২০২৩ এ অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করবেন এবং তার ওই পরীক্ষার ফলাফল ৪৬তম বিসিএসের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ পর্যন্ত প্রকাশ না হলেও তিনি অবতীর্ণ প্রার্থী হিসাবে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তবে তা সাময়িকভাবে গ্রহণ করা হবে। শুধু সেই প্রার্থীকে অবতীর্ণ প্রার্থী হিসাবে বিবেচনা করা হবে যার স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব লিখিত পরীক্ষা ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনপত্র গ্রহণের শেষ তারিখের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছরের নির্বাচনের কারণে যে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে অন্যান্য বিসিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এমন সমস্যা হয়নি। এই কারণে অনেক শিক্ষার্থী এই আবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা আরও ২ মাস বাড়ানো উচিত। কারণ এই সময়ে অনেকের স্নাতক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। এতে অনেকই আবেদন করতে পারবেন। তারা আরও বলছেন, ৪৪তম বিসিএসের আবেদন করার সময়সীমা দুবার বৃদ্ধি করা হয়। গত ৭ বছরে সাতটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এর মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম ছিল বিশেষ বিসিএস। শুধু চিকিৎসক নেওয়া হয়েছিল। বাকিগুলো সাধারণ বিসিএস। সেগুলো হলো ৩৮তম বিসিএস, ৪০তম বিসিএস, ৪১তম বিসিএস, ৪৩তম বিসিএস, ৪৪তম বিসিএস, ৪৫তম বিসিএস ও ৪৬তম বিসিএস।


পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ৩৮তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী। ৪০তম বিসিএসে ৪ লাখ ১২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ৪১তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক ৪ লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থীর আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। ৪৩তম বিসিএসে আবেদন জমা পড়ে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০টি। ৪৪তম বিসিএসে মোট আবেদন করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন, ৪৫তম বিসিএসে মোট আবেদন করেছেন ৩ লাখ ১৮ হাজার প্রার্থী।


আবেদনকারীর সংখ্যা থেকে দেখা যায়, সর্বশেষ সাতটি সাধারণ বিসিএসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছিল ৪১তম বিসিএসে। আবেদনের হিসাবে ৪৬তম বিসিএস সর্বনিম্ন অবস্থায় আছে।


পিএসসি সূত্রে আরও জানা যায়, ৩৪তম বিসিএসে ২ হাজার ১৫৯ জন, ৩৫তম বিসিএসে ১ হাজার ৮০৩, ৩৬তম বিসিএসে ২ হাজার ১৮০, ৩৭তম বিসিএসে ১ হাজার ২২৬, ৩৮তম বিসিএসে ২ হাজার ২৪, ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯২৯ ও ৪১তম বিসিএসে ২ হাজার ৫২০ জনকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৪৩তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৮১৪ জন, ৪৪তম থেকে ১ হাজার ৭১০, ৪৫তম থেকে ২ হাজার ৩০৯ ও সর্বশেষ ৪৬তম বিসিএসে ৩ হাজার ১৪০জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। যা বিগত ১০টি বিসিএসের মধ্যে সর্বোচ্চ পদের বিজ্ঞপ্তি। ৩৯তম ও ৪২তম বিসিএস দুটি ছিল চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ বিসিএস।


শেয়ার করুন