২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৬:১৯:০৩ পূর্বাহ্ন
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পরিপত্র জারি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৩
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পরিপত্র জারি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশী-বিদেশী সমালোচনার জবাব দিতে কঠোর থেকে কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। যেখানেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে-সেখানেই অ্যাকশান নেওয়া হচ্ছে। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলকেও। নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ। বৃহস্প্রতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একগুচ্ছ পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এসব পরিপত্রে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনে কোন সংস্থা কীভাবে কোথায় কি দায়িত্ব পালন করবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।


সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ফৌজদারি কার্যবিধি ও অন্যান্য আইনের বিধান অনুসারে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের ৭ম ও ১০ম অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা বা থানায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে। 


সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা, উপজেলা, মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। রিটার্নিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার প্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোটগণনা কক্ষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হবে এবং আইন, বিধি ও পদ্ধতিগতভাবে কার্যক্রম গৃহীত হবে। উপকূলবর্তী এলাকায় নৌ-বাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকির বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা কম-বেশি করা যাবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সডক, মহাসড়কসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীসমূহের অনুরোধে উড্ডয়ন সহায়তা প্রদান করবে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুসারে এলাকাভিত্তিক মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।


এ সময়ে বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনী কী দায়িত্ব পালন করবে তা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি যে দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আর্মড পুলিশ ও আনসার সেটারও  দিকনির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আর্মড পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। জেলা, উপজেলা, থানাসমূহে বিজিবি এবং উপকূলীয় এলাকাসমূহে কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করবে। রিটার্নিং অফিসারের চাহিদা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে। বিজিবি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড ব্যবহার করতে পারবে। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোটগণনা কক্ষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।


এদের সঙ্গে র‌্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে ও নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী এবারও কোনো ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অথবা তার পক্ষে ক্যাম্প স্থাপন করা যাবে না। এ নিষেধাজ্ঞায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৭৯ (৪) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত রিটার্নিং অফিসারের এখতিয়ার ক্ষুণœ হবে না, ভোটকেন্দ্রে কোনো প্রকারের দাঙ্গা, সন্ত্রাস বা অনিয়ম সংঘটিত হলে কিংবা আইন ও বিধির কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগভাবে ভোটগ্রহণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী নিজ নিজ সংস্থার যানবাহন ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেবে, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ করে অধিযাচনকৃত ও ভাড়াকৃত যানবাহন ব্যবহার করবে।


এদিকে নির্বাচনে পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলের এলাকায় হেলিকপ্টারে যাতায়াত করবেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগে ও পরে পার্বত্য-দুর্গম অঞ্চলে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হবে। সেসব এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোর নির্বাচনী কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য এবং নির্বাচনী দ্রব্যাদি পাঠাতে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদানের জন্য সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


পরিপত্রে আরও বলা হয়, ভোটাররা যেন নির্বিঘেœ ও স্বচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, সেজন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলো নিবিড় টহলের ব্যবস্থা করবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং যে কোনো প্রকার বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সদা সজাগ থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন। উল্লিখিত ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনবোধে মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটগণনা শেষ করে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফলাফল না পৌঁছানো পর্যন্ত  পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোটগ্রহণের দিন দন্ডবিধির ১৭১ই ও ১৭১এফ ধারায় বর্ণিত অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে ধূমপান হতে বিরত রাখা এবং দিয়াশলাই, লাইটারসহ দাহ্য পদার্থ বহনে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে, ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক হিটার বা যে কোনো ধরনের চুলা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত পৌঁছানোর জন্য টেলিফোন, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট সংযোগ সচল রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


এবারও নির্বাচনে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে দ্য আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারার বিধান মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এবারও মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সারাদেশে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোটসহ (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচনী এজেন্টরা সেসব যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের যানবাহনে নির্বাচন কমিশনের স্টিকার ব্যবহার করতে হবে। জাতীয় হাইওয়েসমূহের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।


শেয়ার করুন