২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:৫১:৫১ অপরাহ্ন
অসহযোগ অসাধ্য নয়, মনে করে বিএনপি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১২-২০২৩
অসহযোগ অসাধ্য নয়, মনে করে বিএনপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের শেষ ধাপে বিএনপি দেশব্যাপী ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তাতে জনগণকে যুক্ত করতে প্রচারে নেমেছে। যদিও এই কর্মসূচি নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এই আন্দোলন আদৌ সফল হবে কি না, তা নিয়েও আছে সংশয়। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।


বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে এক দফা দাবিতে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ঢিলেঢালা হরতাল-অবরোধের একপর্যায়ে বিএনপি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। গত বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বর্তমান সরকারকে অসহযোগিতা করতে ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করাসহ ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকা, কর ও সেবার বিল জমা না দেওয়া, ব্যাংকের লেনদেন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা এবং বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাঁদেরও আদালতে হাজির না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। অসহযোগের ডাক দিয়েছে বিএনপিকে অনুসরণ করে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসা অন্য দলগুলোও।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের প্রত্যাশা, জনগণের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে ‘অসহযোগ আন্দোলন’ সফল হবে। তিনি গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শক্তিশালী একটি মাধ্যম হিসেবে ‘অসহযোগ’ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক প্রথা অনুসরণ করে বিএনপিও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি দিয়েছে।


অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে এরই মধ্যে দেশব্যাপী জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে বিএনপি ও মিত্র দলগুলো। রাজধানীসহ সারা দেশে তারা তিন দিনব্যাপী জনসংযোগ করছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীতে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন রুহুল কবির রিজভী। গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণফোরাম (মন্টু), পিপলস পার্টিসহ সমমনা দলগুলোও একই রকম কার্যক্রম চালিয়েছে। ভোট বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে আলাদাভাবে লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।


রুহুল কবির রিজভী গতকাল রাজধানীর উত্তরায় লিফলেট বিতরণ শেষে বিএনপি ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রচারকে ‘গণবিরোধী তৎপরতা’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছেও এই একতরফা নির্বাচন আজকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এহেন অবস্থায় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নব্য রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিপক্ষে সরকারের কোলাবরেটর হিসেবে কাজ করছে। এটা গণবিরোধী তৎপরতা।’


বিএনপি ও মিত্ররা আগামীকাল রোববার সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি পালন করবে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। তাঁরা ভোট বর্জনের পক্ষে। তাঁরা বলছেন, অন্য কর্মসূচিতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও অসহযোগের ক্ষেত্রে তা নেই। এখানে জনগণ পরোক্ষভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তাই জনগণকে এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয় করে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।


তবে এ ক্ষেত্রে নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা এবং ভবিষ্যতে কর্মসূচি পালনে নানা প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছে বিএনপি। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে গতকাল আলোচনায় বসেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। সেখানে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার বিষয়ে বিভাগীয়, জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের ইউনিটগুলোকে সক্রিয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ আসে আলোচনায়।


বিএনপির একাধিক নেতা জানান, হরতাল-অবরোধ ছাড়াও ‘অবস্থান’ ও ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি আসতে পারে।


যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু জানান, চলমান কর্মসূচি নিয়ে শিগগির শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হবে। তিনি বলেন, ‘ইসির নিষেধাজ্ঞা, দমন-পীড়নসহ নানা বাধা-বিপত্তিতেও আমরা রাজপথে আছি। অসহযোগের ডাক জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন বাধা ডিঙিয়ে রাজপথে থাকাটাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’ তাঁর মতে, নির্বাচন প্রতিহত করা না গেলেও আন্দোলন থামবে না।


অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি বিএনপির ‘ভ্রান্ত কৌশল’ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। তাঁর মতে, বিএনপি এই কর্মসূচি কার্যকর করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা থাকতে হবে, যা বিএনপির চলমান আন্দোলনে নেই। অসহযোগের বিষয়েও মানুষ সাড়া দেবে বলে মনে হয় না।’


এ প্রসঙ্গে আবদুল মঈন খান অবশ্য বলেন, ‘প্রধানত জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ নাগরিক অধিকার রক্ষার চলমান সংগ্রামে মানুষকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে অকার্যকর করাই এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে ভোট বর্জনসহ ঘোষিত ৫টি বিষয়ে সরকারকে অসহযোগিতা করার জন্য আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছি। জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে চলমান সংগ্রাম সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে—এই বিশ্বাসে আমরা কর্মসূচির ঘোষণা করেছি। গণসংযোগ ও উদ্বুদ্ধকরণের প্রক্রিয়ায় আমরা সেই লক্ষ্যে এই মুহূর্তে কাজ করে যাচ্ছি।’


শেয়ার করুন