০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৪:১৬:২৫ অপরাহ্ন
রোজায় পণ্যমূল্য বাড়ালে জেলে পাঠানো হবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
রোজায় পণ্যমূল্য বাড়ালে জেলে পাঠানো হবে

আসন্ন রোজায় যেসব ব্যবসায়ী অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করে পণ্যমূল্য বাড়াবে, তাদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এতে কাজ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে সহযোগিতা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। 

সোমবার এফবিসিসিআইয়ের মতিঝিল কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নেতারা এ কথা জানান। আসন্ন রোজায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, যারা অনৈতিকভাবে বাজারে সংকট তৈরি করবে, আমরা তাদের সঙ্গে নেই। ব্যবসায়ীদের কেউ অসাধু বলুক, সিন্ডিকেট করা হচ্ছে এমন কোনো কথা উঠুক, তা আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করুক। কোনো সমস্যা হলে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের কোনো বদনাম হোক, তা চাই না। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছি। এলসি খোলা নিয়ে জটিলতা আছে। এটা নিয়ে আমরা কথা বলছি। প্রয়োজনে আরও কথা বলব। মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে কথা উঠেছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটার আগে যেসব মন্ত্রণালয় বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের মধ্যে সমন্বয় হওয়া বেশি জরুরি। 

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, যারা অনৈতিকভাবে বাজারে কারসাজি করে পণ্যের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি করবে, সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত করবে, তাদের পক্ষে এফবিসিসিআই থাকবে না। এটা ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের পরিষ্কার বার্তা। আমাদের বদনাম আমাদেরই ঘোচাতে হবে। আমরা নীতি-নৈতিকতার মধ্যে থেকে ব্যবসা করব। আশা করি, সরকারও আমাদের সহায়তা করবে।

মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। আমরা মানুষের কাছে খাদ্যদ্রব্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ব্যবসা করা সহজ নয়, প্রতিটি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারপরও আমরা ব্যবসা করি জনগণের জন্য, দেশের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং যাব। একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ১০০-১৫০ টাকা বৃদ্ধি হওয়াকে কৃত্রিম সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখান থেকে আমাদের (ব্যবসায়ী) বেরিয়ে আসতে হবে। কেউ যাতে বলতে না পারে সিন্ডিকেটের কথা।


মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট আছে নাকি? সাপ্লাই চেন সব সময় ঠিক রাখার আহ্বান জানিয়ে মাহবুবুল আলম আরও বলেন, সাপ্লাই চেনে কেউ ব্যাঘাত ঘটালে আমাদের আপত্তি আছে। কেউ কৃত্রিমভাবে সাপ্লাই চেনে সংকট সৃষ্টি করলে তার পক্ষে এফবিসিসিআই নেই। কারণ, এটাকে আমরা সমর্থন করি না। এক শতাংশেরও কম ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে চায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।  

ব্যবসায়ী মালিক সমিতিরও মনিটরিং করতে হবে বলে উল্লেখ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, এটা আমাদের দেখতে হবে। কারণ এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি চাই, আমার ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করে লাভ করুক। কিন্তু সেটা যেন অনৈতিক না হয়। আমাদের যাতে সিন্ডিকেট, অসাধু শব্দগুলো শুনতে না হয়। এদিকে আপনারা (ব্যবসায়ী সমিতি) নজর রাখবেন। আমরাই আমাদের ঠিক করব। কাউকে আমাদের ঠিক করার দরকার নেই।

সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, কাজ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠাতে সহযোগিতা করবে এফবিসিসিআই। 

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার অজুহাতে খোলা তেল বাজার থেকে একেবারে উঠিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অথচ এই ব্যবসার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোতে তদারকি বাড়ালে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

ভোজ্যতেল মিলমালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সিটি গ্রুপের পরামর্শক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, সরকার আমাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে সব কোম্পানি এটা পারবে বলে মনে হয় না। খোলা তেলের ব্যাপারে যে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তা হলো- এই তেলে ভিটামিন ‘এ’ থাকে কি না। আমাদের কাছে মনে হয়, খোলা তেলেও ভিটামিন এ’ নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে, আমরা সেভাবে চলব। ডলার সংকটের সময়ে ভোগ্যপণ্যের জন্য আলাদা করে ডলার সংরক্ষণ করা ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। 

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, রমজানের আগে মুরগির দাম একটু বাড়ানো হচ্ছে। এলপিজি আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। অথচ রেস্তোরাঁ খাতে প্রচুর এলপিজির প্রয়োজন। বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করলে সভা করতে করতে লোপাট করা শেষ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর কোনো আমলা দিয়ে নীতি নির্ধারণ যাবে না। ব্যবসায়ীরা নীতি নির্ধারণ করবে। তাহলে বাজারে কোনো সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, বুট ও অ্যাঙ্কর ডালের দাম বাড়ছে। এ খাতের ছোট আমদানিকারকরা এখন আর টিকে নেই। সব বড় আমদানিকারকদের হাতে। সুতরাং, এখনই এই বাজারে নজরদারি বাড়তে হবে। তাজা ফল আমদানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রমজানে খেজুর গুরুত্বপূর্ণ। তিউনিসিয়া-আলজিরিয়া থেকে হিমায়িত কন্টেনারে খেজুর আনতে গেলে দুই মাস সময় লাগে। কিন্তু খেজুরের শুল্ক কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এমনো হয়েছেÑ আমি গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে আসার পরে শুল্কায়ন আরও বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, বিভিন্ন বাজারের অনেক ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য নন। তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা যাচ্ছে না। তবে কাঁচাবাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে জোরালো দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নরুল কবির বলেন, গত এক মাস হলো লবণের উৎপাদন শুরু হয়েছে। আবহাওয়াজানিত কারণে উৎপাদনে একটু সমস্যা হলেও এক মাসের মতো লবণের মজুত আছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লবণের উৎপাদন ভালো হবে। 

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন বলেন, মিলমালিকরা সরবরাহ ঠিক রাখলে আসন্ন রমজানে বড় কোনো সংকট হবে না। মিলমালিকরা যেন কোনো সংকটের কথা বলে সরবরাহ কমিয়ে না দেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। 

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, যেসব পণ্য যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে তারা সরকারকে বোঝায় যে, উৎপাদনে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এটা করতে গিয়ে অনেক সময় ভুল তথ্য দেওয়া হয়। এ জন্য আমরা ভোগ্যপণ্য নিয়ে একটি মন্ত্রণালয় চাই। একেকজন একেক দিকে না গিয়ে আমরা একটি জায়গায় কথা বলতে চাই। সমস্যার সমাধান চাই। 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, সভায় ব্যবসায়ীরা বেশ ইতিবাচক কথা বলেছেন। তাতে আমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল। ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক মানসিকতায় থাকলে বাজারে কোনো বড় সংকট হবে না বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল বলেন, ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। তাহলে আমাদের আর অভিযানের প্রয়োজন পড়বে না।


শেয়ার করুন