২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৮:০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে আফগানদের জয় কেড়ে নিলেন ম্যাক্সওয়েল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে আফগানদের জয় কেড়ে নিলেন ম্যাক্সওয়েল

জীবন পেলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যে কতটা ভয়ংকর হয়ে ওঠেন, সেটাই যেন আজ আবার নতুন করে প্রমাণ করলেন। আফগানিস্তানের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে হারতে থাকা ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরিয়েছেন। একটা পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় ও তাঁর (ম্যাক্সওয়েল) ডাবল সেঞ্চুরির সমীকরণ চলে এসেছিল সমান্তরালে। শেষ পর্যন্ত এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন ম্যাক্সওয়েল। অবিশ্বাস্য ডাবল সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।


২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় ৪ রানেই। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে নাভিন উল হককে ড্রাইভ করতে যান ট্রাভিস হেড। আউটসাইড এজ হওয়া বল সহজেই তালুবন্দী করেছেন আফগানিস্তান উইকেটরক্ষক ইকরাম আলি খিল। ২ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি হেড। প্রথম উইকেট নেওয়ার পর নাভিনের সঙ্গে উল্লাসে মেতেছেন আফগান ক্রিকেটাররা।


প্রথম উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে আসেন মিচেল মার্শ। এসেই আফগানিস্তানের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন মার্শ। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে মার্শকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন নাভিন। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর মার্শও রিভিউ করেননি। ১১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। তাতে ভেঙে যায় দ্বিতীয় উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্শের ২৬ বলে ৩৯ রানের জুটি।


মার্শের পর দ্রুত ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন ওয়ার্নার।নবম ওভারের প্রথম বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ওয়ার্নার। ২৯ বলে ৩ চারে ১৮ রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি ব্যাটার। ঠিক তার পরের বলেই ওমরজাই পেয়েছেন আরও এক উইকেট। কাট শট খেলতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ান উইকেটরক্ষক ব্যাটার জস ইংলিশ প্রথম স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের তালুবন্দী হয়েছেন।


ওয়ার্নার, ইংলিশ টানা দুই বলে আউট হয়ে ফিরে গেলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে যায় ৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৯ রান।ইংলিশ গোল্ডেন ডাক মারার পর  ব্যাটিংয়ে আসেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাক্সওয়েলকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে পরাস্ত করে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকের ব্যবস্থা করেই ফেলেছিলেন ওমরজাই। পরে রিভিউতে দেখা যায়, বল ব্যাটে লেগে তা আফগান উইকেটরক্ষকের কাছাকাছি গিয়ে ড্রপ করেছে।


দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা মারনাস লাবুশেন ধীরে সুস্থে ব্যাটিং করতে থাকেন। ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করছিলেন লাবুশেন। তবে বেশিক্ষণ টেকেনি ম্যাক্সওয়েল-লাবুশেনের পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ হয়েছে ৩৫ বলে ২০ রান। যেখানে ১৫তম ওভারের প্রথম বলে রশিদ খানকে মিড উইকেটে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে যান ম্যাক্সওয়েল। স্ট্রাইক প্রান্তে লাবুশেন পৌঁছানোর আগেই মিড উইকেট থেকে রহমত শাহর অসাধারণ ডিরেক্ট থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে যায়। তাতে অজিদের স্কোর হয়ে যায় ১৪.১ ওভারে ৫ উইকেটে ৬৯ রান।


অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ উইকেট পড়তে পারত ৭৩ রানেই। ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে সদ্য ব্যাটিংয়ে আসা মার্কাস স্টয়নিসের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন রশিদ। রিভিউতে দেখা যায় বল ব্যাটে লাগেনি। আর প্যাডে লাগলেও আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লু থেকে বেঁচে যান স্টয়নিস। তবে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি তিনি। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে রশিদকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লুর ফাদে পড়েন স্টয়নিস। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। ৭ বলে ১ চারে ৬ রান করেছেন স্টয়নিস। তাতে অজিদের স্কোর হয়ে যায় ১৬.৪ ওভারে ৬ উইকেটে ৮৭ রান। 


এক ওভার বিরতিতে রশিদ যখন বোলিংয়ে আসেন, তখন অস্ট্রেলিয়াকে দিয়েছেন আরও এক ধাক্কা। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে স্টার্ককে কট বিহাইন্ড করেন রশিদ। তাতে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ১৮.৩ ওভারে ৭ উইকেটে ৯১ রান। এরপর ২২তম ওভারে গিয়ে জোড়া জীবন পেলেন ম্যাক্সওয়েল। ওভারের দ্বিতীয় বলে অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডারের বিপক্ষে নুর আহমাদ এলবিডব্লুর আবেদন করেন। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিলে দেখা যায় বল স্টাম্পের অনেক ওপর দিয়ে বেড়িয়ে যায়। তারপর একই ওভারের পঞ্চম বলে সুইপ করেছেন ম্যাক্সওয়েল। শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন মুজিব উর রহমান। ব্যক্তিগত ২৭ রান ও ৩৩ রানে ম্যাক্সওয়েল যখন জীবন পেয়েছেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১০১ ও ১১২ রান।


জোড়া জীবন পাওয়া ম্যাক্সওয়েল ধীরেসুস্থে এগিয়েছেন।  ২৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নুরকে মিড অফ দিয়ে চার মেরে ফিফটি করেন ম্যাক্সওয়েল। ৫১ বলে ৭ চারে ফিফটি তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। এই নুরকেই ২৯তম ওভারের প্রথম ও দ্বিতীয় বলে টানা দুটি ছক্কা মেরেছেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিধ্বংসী হয়েছেন। তাঁকে (ম্যাক্সওয়েল) দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন ৯ নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা প্যাট কামিন্স। কামিন্স এক প্রান্ত আগলে রেখে সিঙ্গেল নিয়েছেন। অন্যপ্রান্তে বেধড়ক পেটাচ্ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। ৭৬ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার।


সেঞ্চুরির পর বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর একের পর এক বাউন্ডারিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের গ্যালারি। বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই যেন অস্ট্রেলিয়াকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নুরকে লং অফে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ডান পায়ে মারাত্মক চোট পান ম্যাক্সওয়েল। ব্যথায় কাতড়াতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডারের ইনিংসই তখন শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। ১০১ বলে ১৪৭ রান করার পর যখন তিনি যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছিলেন, তখনও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ৫৮ বলে ৫৫ রান। ওদিকে অ্যাডাম জাম্পা ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল যেন ম্যাচ জেতানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েই আজ মাঠে নেমেছেন। এক পায়ের ওপর ভর করে একের পর এক চার-ছক্কায় আফগানিস্তানের থেকে ম্যাচের লাগাম কেড়ে নিতে থাকেন ম্যাক্সওয়েল। ৪৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৭১ রান।


অস্ট্রেলিয়ার জিততে যেমন ২১ রান দরকার ছিল, ম্যাক্সওয়েলের রান ছিল তখন ১৭৯। যে মুজিবের হাতে জীবন পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার, সেই মুজিবই করতে এসেছেন ইনিংসের ৪৭তম ওভার। ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা দুটি ছক্কা মারেন ম্যাক্সওয়েল। অজি অলরাউন্ডার পরের বলটা কাভার দিয়ে মেরেছেন চার। এরপর ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে ১৯ বল হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিলেন ৩ উইকেটের জয়। একই সঙ্গে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিও তুলে নিলেন ম্যাক্সওয়েল। তাতে নিশ্চিত হলো ২০২৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল। অজিদের এই জয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব ব্যাটিংয়ে যথাযথভাবে পালন করেছেন কামিন্স। ৬৮ বলে ১২ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই প্রমাণ করে তিনি (কামিন্স) ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গীর দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছেন। ১২৮ বলে ২১ চার ও ১০ ছক্কায় ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ম্যাক্সওয়েল। পাশাপাশি বোলিংয়ে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার।


এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শাহিদী। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করেছে আফগানরা। ১৪৩ বলে  ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। বিশ্বকাপে আফগানদের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হয়ে গেলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিয়েছেন জশ হ্যাজলউড। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল স্টার্ক ও জাম্পা।


শেয়ার করুন