২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ১২:৩০:৪০ অপরাহ্ন
আওয়ামী লীগ কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিয়ে আসছে স্মার্ট ইশতেহার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১১-২০২৩
আওয়ামী লীগ কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিয়ে আসছে স্মার্ট ইশতেহার

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০৪ সালে) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে তরুণ সমাজকে টার্গেট করে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে দিন বদলের সনদে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের। এরই ধারবাাহিকতায় ২০১৮ সালে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ স্লোগানে আমার গ্রাম আমার শহর প্রত্যয়ে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। এবার দুয়ারে কড়া নাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। দেশের যুব সমাজকে আকৃষ্ট করতে এবারের ইশতেহারেও শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, উন্নয়নে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। আমরা একসঙ্গে এগিয়ে যাবো। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, এবার হবে কর্মসংস্থান’- এটিই আমাদের এবারের স্লোগান। গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নির্বাচন ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সঙ্গে পেশাজীবী প্রতিনিধিদের এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। এতে বক্তব্য রাখেন- পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, অবজারভার সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল আহসান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির


সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাদ হুদা, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, আইনজীবী রবিউল আলম বদু, এফবিসিআইয়ের পরিচালক ও অভিনেত্রী শমী কায়সার, ওলামা লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন সিরাজী।

পেশাজীবীদের বক্তব্যে সুশাসন, দারিদ্র্য নিরসন, মূল্যস্ফীতি কমানো, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা, দুর্নীতি রোধ, সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার বিষয়টি ইশতেহারে প্রাধান্য দেয়ার দাবি ওঠে আসে।

পেশাজীবীদের এসব মতকে গুরুত্ব দিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ ও কর্মসংস্থান হবে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। সেটি হলে আমরা সত্যিকার অর্থে একটা সমৃদ্ধশালী ও উন্নত জাতি হব সারা পৃথিবীতে। আমরা অহংকার ও গর্ব করে চলতে চাই। নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে আমরা জনগণকে প্রতিশ্রæতি দেব, যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেটাকে পুনরুদ্ধার করে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।

মাথাপিছু আয়, দারিদ্র্য কতটা কমানো হবে সেই পরিকল্পনা ইশতেহারে থাকবে উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন দারিদ্র্যতা ১৮ দশমিক ৪ নামিয়ে আনছি। এটি কমিয়ে আমরা ১২তে নামিয়ে আনব। অতিদরিদ্র ৯ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনব। কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান করতে হলে আমাদের উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা বাড়াতে হবে। এটা বর্তমানে ৩০ শতাংশ থাকলেও আগামীতে ৪০ শতাংশে উন্নতি করতে চায় আওয়ামী লীগ। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিশ্রæতি দিয়েছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা করব, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করব। উন্নয়ন সবার জন্য করব। কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

নির্বাচনী ইশতেহারে চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দুধ, ডিমসহ পুষ্টিকর খাবারে পিছিয়ে আছি। সেটা আগামীতে দূর করতে হবে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। করোনা ভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনীতির কাঠমোটাকে পুনর্গঠন করতে হবে। এটাকে এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যাতে আগের গতিশীলতা ও জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারি। এ লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা এগিয়ে যাব। সাংস্কৃতিক বিকাশ না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ থাকবে না- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে হলে পুরো জনগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। সংস্কৃতিক বিকাশ ঘটাতে হবে এবং সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। ধর্মান্ধ ও সা¤প্রদায়িকতা থেকে মানুষকে বের করার জন্য আরো বেশি সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। আগামীর সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংস্কৃতির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা নির্বাচনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি, মূল্যায়নের ভার আপনাদের। নির্বাচনী ইশতেহার যেন জাতির আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়, তার ভিত্তিতেই নির্বাচনী ইশতেহার দেবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। আওয়ামী লীগ সব সময় গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ কখনো চোরাগলির পথে বা অসংবিধানিক পথে ক্ষমতায় আসেনি। গণতান্ত্রিক চর্চা করেছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চেতনাকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়েছে। যে সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছে- সেসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা তুলে ধরার জন্য নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যত সাফল্য- তার আলোকে আগামী দিনে আওয়ামী লীগ কি করবে, কি তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কীভাবে জাতির আশা আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা পূরণ করবে; তার কর্মসূচি অর্জনের বাস্তবায়নের কৌশল কি হবে- সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।


শেয়ার করুন