২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৭:১৭:১৯ পূর্বাহ্ন
এভারেস্টের পথে আরেক ধাপ এগোলেন তৌকির
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২৩
এভারেস্টের পথে আরেক ধাপ এগোলেন তৌকির

‘বিজয়নগরে হোটেল ৭১-এর সামনে এক পুলিশ সদস্যকে মারছিল কয়েকজন দুর্বৃত্ত। হঠাৎ তারা নাইটিঙ্গেল মোড়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসতে থাকে। তাদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে গ্যাসগানের ট্রিগার টিপলেও কয়েকটি থেকে বের হয়নি। একটি গ্যাসগান থেকে বের হলেও মাত্র দুই হাত দূরে পড়ে। ফলে নিজেদের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের কারণে নিজেদেরই পিছু হটতে হয়।’—কথাগুলো বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা।


রাজধানীতে গত শনিবার বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার অস্ত্র নিয়ে এমন অভিজ্ঞতা জানান ডিএমপির আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের কয়েকজন সদস্যও একই রকম কথা জানান। মাঠে থাকা এসব কর্মকর্তা ও সদস্যরা বলেন, অস্ত্রগুলো ঠিকমতো কাজ করেনি। অনেক আগে কেনা অস্ত্রগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ফলে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড গতি পাচ্ছে না।


গতকাল রোববার বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হয়। কেউ কেউ দাঙ্গা দমনের অপ্রতুল প্রশিক্ষণের কথাও বলেন।


জানতে চাইলে গতকাল রোববার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সব গ্যাসগানের এমন হওয়ার কথা নয়। দু-একটার সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা বেশি দেখা দিলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গ্যাসগান নিয়ে আসা হবে।


রাজধানীতে শনিবার বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সময় আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং অর্ধশত সদস্য আহত হন। আমিরুল চলনবিলের সন্তান পর্বতারোহী আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। পাবনার চাটমোহর পৌর সদরে বেড়ে ওঠা এই তরুণ পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও পর্বতারোহণে তাঁর রয়েছে বেশ কিছু সফলতা। হিমালয়ের চার, পাঁচ এবং ছয় হাজার মিটার উচ্চতায় শুধু লাল-সবুজের মাতৃভূমিকে।


১৯ ও ২১ অক্টোবর তৌকির দুটি পর্বতচূড়া আরোহণ করেন। ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ১৬ মিনিটে খুম্বু রিজিয়নের ৫ হাজার ৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ২১ অক্টোবর সকাল ৮টা ২১ মিনিটে ৬ হাজার ১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন তৌকির।


জানা গেছে, লবুচে হাই ক্যাম্প থেকে সামিট শেষ করে আবার হাই ক্যাম্পে ফিরতে তিনি মাত্র ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিট সময় নেন। এ বছর তাঁর ঝুলিতে আরও একটি অর্জন যুক্ত হয়েছে। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে কমার্শিয়াল এক্সপেডিশনের দলনেতা হয়ে ৬ হাজার মিটারের একটি সফল অভিযান সম্পন্ন করেছেন।


এর আগে গত বছর হিমালয়ের এভারেস্ট-খুম্বু রিজিয়নের ৬ হাজার ১৬৫ মিটার আইল্যান্ড পিক সফল অভিযানের মাধ্যমে ছয় হাজার মিটার পর্বতারোহী ক্লাবের সদস্য হন তৌকির। তাঁর এই অভিযানে সহযোগিতায় ছিল রোপ ফোর, মিশন হিমালয়া, আরপিএসএফ। স্বপ্নবাজ এই তরুণ আরও একটি অভিযানের জন্য বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন। অভিযান শেষে আগামী ৯ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন। 


এই অর্জন নিয়ে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে অনলাইন মাধ্যমে তৌকির এই প্রতিনিধিকে জানান, ‘হিমালয়ের সবগুলো পর্বত অভিযানই কষ্টসাধ্য। প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ক্লাইম্বিং শেষে যখন নিজ দেশের লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, তখন সব কষ্ট নিমেষেই আনন্দে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।’


তরুণ এই পর্বতারোহীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, আগামী বছর হিমালয়ের অন্যতম কঠিন পর্বত মাউন্ট আমা দাবালাম অভিযানে যাবেন। এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই অভিযান আরও সহজ হবে বলে জানান তিনি। তৌকির আরও জানান, ২০২৫ সালে তাঁর মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।


উল্লেখ্য, আহসানুজ্জামান তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু ও সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তৌকির। তিনি চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল ইতে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন।


শেয়ার করুন