৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:১৮:২৩ পূর্বাহ্ন
ভালো শেষের আশা বাংলাদেশের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২৩
ভালো শেষের আশা বাংলাদেশের

এই কদিনে কলম্বোয় বাংলাদেশ টিম হোটেলের নামটা মুখস্থ হয়ে যাওয়ার কথা ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ পাঠকদের। গত এক সপ্তাহে মাঠের চেয়ে কলম্বোর সিনামন গ্র্যান্ড যেন হয়ে উঠেছিল সাংবাদিকদের কাছে সংবাদ আর ফুটেজ সংগ্রহের মূল স্পট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের পর পাঁচ দিনের বিরতিতে টিম হোটেল তাই বারবার সামনে এসেছে। 


হোটেল লবিতে এই কদিনে বাংলাদেশের যে ছবিটা দেখা গেল, তাতে আসলে বলার অপেক্ষা রাখে না, শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার হতাশা গ্রাস করেছে পুরো দলকে। খেলোয়াড়েরা চেষ্টা করেছেন সংবাদমাধ্যম থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে। দলের প্রতিনিধি হয়ে কেউ কথা বললে সেটাও নানাভাবে ট্রল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। টুর্নামেন্টে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো না করার হতাশা তো আছেই, তার সঙ্গে দলের বিরক্তি বাড়িয়েছে ফেসবুকের বিষাক্ত ট্রল। সেটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গতকাল সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনটা হলো ‘অন্য রকম’। 


হোটেল লবিতে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের সব তির্যক উত্তরই এল সাকিবের কাছ থেকে। বাউন্সারের জবাবে তাঁর হুক-পুলের বিপরীতে একটা ক্ল্যাসিক ড্রাইভও ছিল। টুর্নামেন্টের দুই ফাইনালিস্ট চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় আজ যেহেতু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। আপাত-গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাকিবের কাছে ম্যাচটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কেন? সেটির ব্যাখ্যা বাংলাদেশ অধিনায়ক দিয়েছেন এভাবে, ‘চাওয়া-পাওয়ার আছে। আমরা যদি শেষ ম্যাচে জিতে দেশে যেতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য ভালো। এই ম্যাচ থেকে অন্য কিছু চাই না। শুধু জিততেই চাই।’ 


যতই প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হোক, শেষটা ভালো করতেই ভারতের বিপক্ষে আজ ম্যাচ জিততে উন্মুখ বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে দুই দল মুখোমুখি ৩৯ সাক্ষাতে সাতটিতে জেতার সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। এই সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে একাধিক দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জেতার রেকর্ডও আছে বাংলাদেশের। গত ডিসেম্বরেই মিরপুরে দুর্দান্ত বাংলাদেশ দেখে এসেছে ভারত। অবশ্য চোখ রাঙানোর মতো পরিসংখ্যানও আছে। এশিয়া কাপে ভারতের কাছে ১২ ম্যাচের ১১টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। গত আট বছরে কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টে ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল যে আগুনে ফর্মে আছেন—আজ কে হতে পারেন সবচেয়ে ভয়ংকর? গতকাল এই প্রশ্নে সাকিবের উত্তর ছিল, ‘পুরো ভারতীয় দলই আমাদের হুমকি।’ 


বৃষ্টি, টানা খেলায় আরও মন্থর হয়ে পড়া প্রেমাদাসার উইকেটে আজ বাংলাদেশকে খেলতে হবে একাধিক পরিবর্তন নিয়ে। মুশফিকুর রহিম নেই, আগেই জানা গেছে। লিটন দাসকে কিপিং করাবে নাকি বিকল্প উইকেটকিপার-ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে একটা সুযোগ দেবে—সেটি এক প্রশ্ন। ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়ায় ওপেনিংয়ে নাঈম শেখের জায়গায় তানজিদ হাসান তামিম আরেকটা সুযোগ পাবেন কি না, সেটিও দেখার। এরই মধ্যে ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতও বাংলাদেশের বিপক্ষে একাদশ পরিবর্তন করতে পারে। 


গতকাল হোটেল লবিতে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দেখা হতেই যখন বলা হলো, ম্যাচটা একটা ‘পজিটিভ নোটে’ শেষ করতে পারলে দারুণ হয়। ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই…’—সামনে এগিয়ে যেতেই হাথুরুকে যখন বলা হলো, চারদিকে দলকে নিয়ে যে কথা হচ্ছে, কীভাবে দেখছেন? কাঁধ ঝাঁকিয়ে হাথুরুর অভিব্যক্তি বলল, ‘এসব গায়ে মাখি না।’ 


পেশাদার ক্রিকেটে আসলে গায়ে মাখলেও চলে না। ব্যর্থতা, হতাশাগুলো পুকুর থেকে উঠে আসা হাঁসের মতো ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে সামনে এগোতে হয়। সাকিবই বলছিলেন, বিশ্বকাপ অভিযানের আগে এখনো অন্তত ৬টা ওয়ানডে খেলতে হবে তাঁদের। এমনকি এশিয়া কাপ থেকে এখনো তাঁদের নেওয়ার আছে। আজ ভারতের বিপক্ষে এই ‘ডেড রাবারে’ দারুণ কিছু করতে পারলে বিশ্বকাপ অভিযানে সেটি আত্মবিশ্বাসের বড় জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে নিশ্চিত।


শেয়ার করুন