৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:১১:০৮ পূর্বাহ্ন
পাচারের অর্থ ফেরাতে ‘পরামর্শক প্রতিষ্ঠান’ নিয়োগের উদ্যোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
পাচারের অর্থ ফেরাতে ‘পরামর্শক প্রতিষ্ঠান’ নিয়োগের উদ্যোগ

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবার বিদেশি আইনি সংস্থা বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের চিন্তা করছে সরকার। এই উদ্যোগের আইনগত দিক খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন শুল্ক গোয়েন্দা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।


বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের এক সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। টাস্কফোর্সের সভাপতি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনের সই করা ওই কার্যবিবরণী গত ৩১ আগস্ট সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।


পাচার করা টাকা ফেরত আনার এই উদ্যোগকে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর। তবে এ ধরনের কাজে সরকারের সদিচ্ছাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তাঁরা।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কমিশনের ভিত্তিতে অ্যাসেট উদ্ধারের কার্যক্রম এর আগে সফল হয়নি। অথচ কোরিয়া, থাইল্যান্ডে এটা সফল হয়েছিল। কাজেই চেষ্টা করতে পারে। তবে কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা বলা কঠিন।


আরেক সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। অন্তত একটা উদ্যোগ তো নিয়েছে। কিন্তু এটা ফলপ্রসূ করতে হলে যে দেশে টাকা পাচার হয়েছে, সে দেশের সরকার এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে সরকারিভাবে টেকওভার করতে হবে। এর আগে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির কথা বলে অনেকে ইলেকট্রনিক পণ্য নিয়ে এসেছে।


সেগুলো ধরাও পড়েছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, সরকারের মনোভাব পরিবর্তন হচ্ছে। যেসব দেশে বাংলাদেশি নাগরিকেরা খুবই সম্পদশালী, তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।


উল্লেখ্য, কমিশনভিত্তিক এজেন্টের মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নজির আছে। এর আগে ২০০৯ সালে ‘অক্টোখান’ নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সিঙ্গাপুরে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা হয়েছে। এর বিনিময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে উদ্ধার করা অর্থের ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে দেয় দুদক। পরে দুই দফা চুক্তির নবায়ন হলেও ২০১৫ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করা হয়নি।


তবে কমিশন দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ দুদক। তথ্যপ্রাপ্তিতে যে অর্থ ব্যয় হবে, সেটাকে ‘খরচা’ হিসেবে দেখছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘কমিশনের ভিত্তিতে’ কথাটা আসলে ঠিক নয়। ধরেন, আপনাকে একটা তথ্য সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামে পাঠালাম। এ জন্য ভাড়া এবং খরচের টাকা দিচ্ছি। তথ্য প্রদানের জন্য যিনি কাজ করেন, তাঁকে কিছু খরচা দিতে হয়। এটা কমিশন নয়।


পাচারের টাকা ফেরত আনতে যত উদ্যোগ 

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে এর আগে নানা উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাতে খুব একটা সফলতা আসেনি। এবারও যেসব বাংলাদেশি রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁদের অর্থের উৎস, পেশা, বাসস্থানের তথ্য সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে নোট ভার্বাল ইস্যু করা হয়েছে। নোট ভার্বালের পাশাপাশি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হবে। এ ছাড়া কনভার্ট ওয়ে বা ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা বানানো যেতে পারে বলেও টাস্কফোর্সের সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে।


বিভিন্ন দেশে পাঠানো এসব অনুরোধে সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দুদকের অনুরোধে সাড়া মিলছে না। অর্থ পাচারের তদন্ত করতে বিভিন্ন দেশে দুদক ৩৪টি এমএলএআর পাঠিয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুটি অনুরোধের সাড়া পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে জবাব পাওয়া যায়নি।


পাচারের অর্থ ফেরাতে গত অর্থবছরে ‘অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টি’ নামের একটি কার্যক্রম নিয়েছিল সরকার। এর আওতায় ৭ শতাংশ হারে কর দিয়ে অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলেও ওই কার্যক্রমে পাচারের একটি টাকাও ফেরত আসেনি।


এ প্রসঙ্গে জানতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এখনো আলোচনার পর্যায়েই আছে। এই কাজ এককভাবে এনবিআরের নয়।


এই কাজের সঙ্গে দুদক, সিআইডি ও বিএসইসি যুক্ত আছে। এখানে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে যে অর্থ পাচার হয়, সেটাই এনবিআরের এখতিয়ারভুক্ত। এ ধরনের পাচার এখন কমে গেছে, সামনে হয়তো শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।


শেয়ার করুন