সামনে দ্বাদশ (১২তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথ দখলে রাখতে মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে রাজপথসহ দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের নামে সামনে আরও নাশকতা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কা করছে সরকার, যে কারণে সরকারও নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। একদিকে বিগত নির্বাচনগুলোর আগে-পরে ‘নৈরাজ্যকারীদের’ বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো সচল ও দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের নামে নৈরাজ্য চালাতে পারে। এছাড়াও এ সুযোগে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখেই সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে দূরবর্তী টার্গেটকে প্রতিরোধ করতে ‘লং রেঞ্জে’র ৯০ হাজার টিয়ার গ্যাস শেল আনা হচ্ছে তুরস্ক থেকে।
৩ সেপ্টেম্বর (২০২৩) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি মো. জাহিদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক সরকারি আদেশে জানা গেছে, টিয়ার শেষ আনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম ফেরদৌস, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি কুসুম দেওয়ান এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পুলিশ সুপার মনজুর আহমেদ সিদ্দিক তুরস্ক গেছেন। তারা সেখানকার টিয়ার গ্যাস শেলের ফ্যাক্টরি পরিদর্শন ও এসবের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখবেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গত সপ্তাহে এক নির্দেশনায় পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। থানাগুলোতে অস্ত্র, গোলাবারুদ যথেষ্ট আছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), সহকারী কমিশনার (এসি) ও উপ পুলিশ কমিশনাররা (ডিসি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (লজিস্টিক) নিয়মিত অবহিত করতে বলা হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশি কার্যক্রমের নতুন নতুন কৌশল জানাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে মুলতবি থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিএমপির অপরাধ বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির অপরাধ বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগে দুই বছরের বেশি মুলতবি থাকা ১৩৪টি রাজনৈতিক মামলাও নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার জুলাই (২০২৩) মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পাশাপাশি যেসব মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে বা অন্য কোনও কারণে স্থগিত রয়েছে সেগুলো সচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছিল তিন হাজার ৭৮৬টি। এরমধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় তিন হাজার ৫৪৯টির। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় ১৮৬টি মামলার। এখনও তদন্ত শেষ হয়নি ৫১টি মামলার।
এছাড়াও ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন (২০১৫) পর্যন্ত সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হয়েছিল আরও এক হাজার ৮২৬টি। এরমধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৭৮৯টি মামলার। চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ৩৩টি মামলায়। চারটি মামলা এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। এ মামলাগুলোর আসামি বা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দফতরকে তদারকি অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। সেসব সহিংস কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪৩৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল সারাদেশে। এরমধ্যে ৩৮৬টি মামলায় অভিযোগপত্র এবং ৩৩টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্যদের এক সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং দেশ বিরোধী যে কোনও চক্রান্ত রুখে দিতে সব পুলিশ সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা দরকার- তাই করা হবে। সূত্র: বাংলাট্রিবিউন