১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:০৯:০৪ অপরাহ্ন
বগুড়ার শাজাহানপুরে সুদে সর্বস্বান্ত মানুষ, ছাড়ছে ভিটেমাটি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৮-২০২৩
বগুড়ার শাজাহানপুরে সুদে সর্বস্বান্ত মানুষ, ছাড়ছে ভিটেমাটি

মাছের ব্যবসা করার জন্য ৮ বছর আগে সুদে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন শ্যামল মোহন্ত। দাদন ব্যবসায়ীকে প্রতিদিন সুদ দিতে হতো ২০০ টাকা। ৬ বছর সুদ দেওয়ার পর আসল আর শোধ করতে পারছিলেন না তিনি। সুদের কারবারির গালিগালাজ ও অব্যাহত হুমকি থেকে বাঁচতে দুই বছর আগে এক রাতে সপরিবারে পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যান শ্যামল। এরপর আর কখনো বাড়ি আসতে পারেননি তিনি।


শ্যামল (৪০) বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ডেমাজানী পালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে গেলে তাঁর বড় ভাই মৎস্য ব্যবসায়ী প্রশান্ত মোহন্ত (৪৫) এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দাদন ব্যবসায়ী একই গ্রামের নিত্যানন্দ দাস (৫২)। সুদের কারবারের পাশাপাশি তাঁর আড়িয়া ইউনিয়নের আড়িয়া বাজারে মাছের আড়তের ব্যবসাও আছে।


প্রশান্ত নিজেও ঋণের ভারে জর্জরিত। এক বছর আগে নিত্যানন্দের কাছ থেকে মাছ ব্যবসার জন্য ৫০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলেন। সেই টাকায় প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়। প্রায় ৪ মাস হলো প্রশান্ত আর সুদের টাকা দিতে পারছেন না। চক্রবৃদ্ধি হারে এখন সুদাসলে সেই টাকা অনেক হয়েছে। টাকার জন্য প্রতিদিন নিত্যানন্দ চাপ দেন। ভিটেমাটি বিক্রি করেও সেই টাকা শোধ হবে না বলে জানান প্রশান্ত।


একই গ্রামের সুবল চন্দ্র দাস (৬৫) বলেন, ‘প্রয়োজনে নিত্যানন্দের কাছ থেকে কখনো ১০ হাজার, কখনো ২০ হাজার টাকার মাছ নিয়েছি। ১০ বছর আগে নিত্যানন্দ আমাকে জানান, তাঁর কাছে আমার ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাঁড়িয়েছে। সেই টাকার প্রতিদিন ২ হাজার ৬০০ টাকা হারে সুদ ধরেন। দুই মাস ধরে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছি। এ জন্য তিনি আমাকে প্রতিদিন অপদস্থ করছেন।’


পালপাড়া গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী বলরামসহ অনেকে আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু ডেমাজানী পালপাড়া গ্রামের অন্তত ১২টি পরিবার নিত্যানন্দ দাসের সুদে আটকে সর্বস্বান্ত হয়েছে। এর বাইরেও আমরুল ইউনিয়নের রাধানগর হিন্দুপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নিত্যানন্দের সুদে আটকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকে। প্রতিকার না পাওয়ার আশঙ্কায় ভুক্তভোগীরা কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ দেন না।


তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিত্যানন্দ দাস। তিনি বলেন, ‘আড়িয়া বাজারে আমার মাছের আড়ত থেকে ওরা (সুদ নেওয়া ব্যক্তিরা) মাছ বাকি নিয়েছিলেন। আইপিএলসহ বিভিন্ন জুয়া খেলে টাকা হেরে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’


শেয়ার করুন