২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৭:১৭ অপরাহ্ন
চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত ক্রেতা
চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত ক্রেতা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১০-২০২২
চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রতারিত ক্রেতা



আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি: মাত্র ৪ লাখ টাকায় কক্সবাজারে ফাইভ স্টার হোটেলের মালিকানা’-এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান অসংখ্য ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। হোটেল স্যুইটের ‘স্লট’ বিক্রির নামে ‘কোরাল রিফ প্রপারটিজ লিমিটেড (সিআরপিএল)’ লাখ লাখ টাকা নিলেও সবাইকে রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে চুক্তিও মানা হয়নি। একজন স্লট মালিক বছরে কতদিন হোটেলে থাকতে পারবেন, কতভাগ লভ্যাংশ পাবেন-চুক্তিতে সেসব থাকলেও পদে পদে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। সিআরপিএল’র চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ভুক্তভোগীরা একের পর এক মামলা করছেন। তবে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছে পরিচালনা কর্তৃপক্ষ গ্র্যান্ড হেরিটেজ লিমিটেড (জিএইচএল)।




সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-কক্সবাজারের কলাতলী বিচ এলাকায় ‘ফাইভস্টার হোটেল’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিআরপিএল। ২০০৯ সালে পত্রপত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে হোটেল স্যুইটের ‘স্লট’ বিক্রি করা হয়। ‘মাত্র ৪ লাখ টাকায় ফাইভ স্টার হোটেলের মালিকানা’ গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে। বিজ্ঞাপনে আরও বলা হয়-একজন মালিক প্রতিবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩ দিন ও ৩ রাত এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ দিন ও ২ রাত করে ১২ মাসে ১২ বার থাকতে পারবেন। এছাড়া ভাড়ার লভ্যাংশ পাবেন। প্রত্যেক স্লট মালিক সাফ কবলা রেজিস্ট্রিমূলে আজীবনের জন্য স্যুইটের মালিকানা পাবেন। ৪ লাখ টাকার বিনিয়োগে ৩০ লাখ টাকার সমান রিটার্ন পাঁচ বছরেই উঠে আসবে বলেও বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ করা হয়।


সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে নির্মাণ শেষে হোটেলটি যাত্রা শুরু করে। ডেভেলপার কোম্পানি হিসাবে সিআরপিএল হোটেল নির্মাণ এবং স্লট বিক্রি করলেও হোটেল পরিচালনার জন্য আলাদা লাইসেন্স নেওয়া হয়। হোটেল পরিচালনার জন্য গ্র্যান্ড হেরিটেজ লিমিটেডের (জিএইচএল) নামে লাইসেন্স নেওয়া হয়। জিএইচএল’রও চেয়ারম্যান হন ফখরুল ইসলাম। ‘বেস্টওয়েস্টার্ন’ নামে হোটেলটি পরিচালনা করা হচ্ছে। হোটেল পরিচালনায় জিএইচএল বোর্ড রয়েছে।


স্লট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আনোয়ার খান যুগান্তরকে বলেন, নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্লট বিক্রির নামে টাকা নিলেও ১০ বছর পরও রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়নি। যে পরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা ছিল তাও দেওয়া হচ্ছে না। স্লট মালিকদের যেখানে বছরে ১ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা সেখানে ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। স্লট মালিক হিসাবে বছরে অন্তত ১২ দিন থাকার প্রলোভন থাকলেও এমনও অনেকে আছেন যারা বছরে ১ দিনও ওই হোটেলে থাকার সুযোগ পাননি। প্রকৃত স্লট মালিকদের বাদ দিয়ে নিজস্ব লোকদের দিয়ে বোর্ড গঠন করে হোটেল পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেক গ্রাহক টাকা হারিয়ে দিশেহারা।


গত সপ্তাহে সিআরপিএল’র চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঢাকার বাসিন্দা মুন্নি জাহান মামলা করেছেন। ১২ লাখ টাকায় দুটি স্লট কিনলেও তাকে ১০ বছরেও রেজিস্ট্রি দেওয়া হয়নি বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়। স্লট বিক্রির নামে ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামে মামলা করেছেন শামসুল আনোয়ার খান। টাকা নিয়ে ৭ থেকে ১০ বছরেও স্লট রেজিস্ট্রি করে না দেওয়ায় আরও কয়েকজন মামলা করেছেন। তারা হলেন-চট্টগ্রামের শামীমা হারুন লুবনা ও আবদুর রহমান, ঢাকার সিরাজুল হক ও খুরশিদা জাহান, ময়মনসিংহের ডা. মোশাররফ জেবিন এবং খুলনার শিমুল।


কোরাল রিফের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও সেটি বারবার ‘বিজি’ পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অপারেশন কামরান দিদার যুগান্তরকে বলেন, হোটেলের ২ হাজার ৪২৫টি স্লটের মধ্যে ২ হাজার ২০৮টি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি মাত্র ২০৮টি। এরমধ্যে ১৬০টি স্লটের পেমেন্ট ডিও বা বকেয়া রয়েছে। এ কারণে তাদের রেজিস্ট্রি করে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার একটি স্যুইটের ১২ জন মালিক হওয়ায় স্যুইটের এক বা একাধিক ক্রেতা টাকা পরিশোধ করেননি। কয়েকজন পুরো টাকা পরিশোধ না করায় রেজিস্ট্রি করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, কোরাল রিফ স্লট বিক্রি করেছে। হোটেল পরিচালনা করছে আলাদা প্রতিষ্ঠান। কোরাল রিফের ক্রেতাদের সঙ্গে হোটেল পরিচালনা কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পর্ক নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ স্লট ওনারের মতামতের ভিত্তিতে হোটেল পরিচালনা বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন ফখরুল ইসলাম। সব নিয়মকানুন মেনে হোটেল চলছে। স্লট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অবৈধ বলেও তিনি দাবি করেন।

শেয়ার করুন