১৩ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০১:৩৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না: তারেক রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২৫
অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না: তারেক রহমান

আমি যেভাবে দেখি, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল...বাংলাদেশের শত্রু মিত্র চিহ্নিত করার দিন। 


বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে আমার একটি উক্তি মনে আসে উক্তিটি এ রকম  'অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে এক চোখ অন্ধ, অতীতকে ভুলে গেলে দু'চোখই অন্ধ'।


সুতরাং, আমাদেরকে যেমন সারাসময় ইতিহাস চর্চায় থাকার দরকার নেই অপরদিকে ভবিষ্যতের পথ চলায় ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করাও কিন্তু আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল। তাই ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর সম্পর্কে আপনাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ  আলোচনার রেশ ধরেই আমি বলতে চাই।


যারা বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে চেয়েছিলো, যারা জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারহরণ করে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল, যারা দেশের শৌর্য বীর্য সাহস এবং সম্মানের প্রতীক সেনাবাহিনীর  গৌরবকে ভুলুন্ঠিত করতে চেয়েছিলো,  ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই দিনে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের পরাজয় ঘটেছে।


দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি পরবর্তীতে পুনরায় মহাজোটের নামে একজোট হয়ে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বিডিআর পিলখানায় পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখতে চেয়েছিলো,    জনগণের ভোটের অধিকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল।  


হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর জনতার গণ অভ্যুত্থানে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। বিএনপি মনে করে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ২০২৪ ছিল দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।


সুতরাং, ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে দেশ এবং জনগণের অধিকার হরণ করতে না পারে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এটিই হোক আমাদের এবারের ৭ নভেম্বরের প্রধান অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-ভৌগোলিকরাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে চাই তাহলে আমাদেরকে ৭ নভেম্বরের মতো সিপাহী জনতার বিপ্লবের চেতনা মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে।


৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তাবেদার অপশক্তির বিরুদ্ধে সিপাহী জনতার বিপ্লব, ৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন কিংবা ২৪ এর ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থান এভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে প্রতিটি বিপ্লব কিংবা অভ্যুত্থানের একটাই আকাঙ্খা ছিল। কি সেটি? সেটি হলো স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। 


দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী চক্রের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে গিয়েও অসংখ্য অগণিত মানুষ জীবন দিয়েছেন। শুধুমাত্র জুলাই-আগষ্টেই শহীদ হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা-নারী-পুরুষ-কৃষক-শ্রমিক সকল শ্রেণী পেশার মানুষ কেন রাজপথে নেমে এসেছিলেন?  


আমাদের জানা থাকা দরকার জনগণ কিন্তু রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজপথে নেমে এসেছিলেন।  একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, অবশ্যই কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলবা গোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা রাজনৈতিক দরকষাকষি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্যই হাজারো লাখো মানুষ রাজপথে জীবন বিলিয়ে দেয়নি।


জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র যখন প্রস্তুত হচ্ছে তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দলঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কার্যতঃ গণতন্ত্রকামী জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে/অবস্থান নিয়েছে। 


আমি আবারো ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জনগণের মুখোমুখী হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদেরবাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠি রয়েছেন।


এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয়জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।   


মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিলো অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন।  কিন্তু এইসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠির নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল? 


আমন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন?  নারীর নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিলো?  দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর  স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠির প্রতিটিদিনের জীবন যুদ্ধের কথা কি রাজনীতিবিদদের আলোচনার  তালিকায় স্থান করে নিতে 

পেরেছিলো? 


দেশে কিন্তু শুধু কোটা সংস্কার নয় নিরাপদ সড়কের জন্যও তুমুল আন্দোলন হয়েছিল।  ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে সড়ক পথে কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ। 


বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে  নানা বিষয়ে শত শত দফা নিয়েআলোচনা হলেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কি আলোচনায় জায়গা করে নিতে পেরেছিলো? এইসব প্রশ্নগুলো কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়।     


বরং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরা কথা দাঁড়িয়ে আছি কিংবা আমার নিজের কাছেই আমার প্ৰশ্ন আমাদের রাজনীতি তাহলে কাদের জন্য?  দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার কিছু প্রশ্ন আমার কিছু উপলব্ধির কথা আমি   আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।  এ জন্য আজ আমি আপনাদের কাছে একটু অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিচ্ছি। আশা করি বিরক্ত হবেন না।  


শেয়ার করুন