ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় এই বৈঠক শুরু হয়। গত রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুতিনের সঙ্গে এটাই তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ।
বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রয়েছেন। অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে রয়েছেন দেশটির দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
বৈঠক শুরুর আগে উভয় নেতা প্রেসিডেনশিয়াল জেট বিমানে করে আলাস্কায় পৌঁছেন এবং স্মিত হেসে দুজন করমর্দন করেন।
লাল গালিচায় অনার গার্ড স্যালুটের আগে টারমাকে তাঁরা পরস্পরকে অভিবাদন জানান।
এ সময় যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে চক্কর দিচ্ছিল। হঠাৎ একজন সাংবাদিক বেশ চিৎকার করে পুতিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কি বেসামরিক লোক হত্যা বন্ধ করবেন?’ কিন্তু দুই নেতার কেউ তাঁর এই প্রশ্নে সাড়া দেননি।
এবারের এই বৈঠকে ট্রাম্পের লক্ষ্য ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে নিজের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।
নিজেকে ‘বৈশ্বিক শান্তিদূত’ হিসেবে উপস্থাপন করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে অন্যদের ব্যর্থতার জায়গায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সাফল্য পাওয়ার আশা করছেন। তবে বৈঠক ‘সফল না হওয়ার সুযোগ ২৫ শতাংশ’ বলে গত বৃহস্পতিবারই তিনি ধারণা দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় তাঁদের বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে সমবেত হন মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি সতর্ক করেছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে গৃহীত যেকোনো সমাধান অর্থহীন হবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের উপস্থিতি ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠক নিয়ে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ শহরে খুব একটা চঞ্চলতা দেখা যাচ্ছে না। বরং সাংবাদিকরা সেখানে অন্য রাজ্য থেকে ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছেন।
বৈঠকটি একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটির কাছের এক ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নিরাপত্তা আর সময় স্বল্পতার বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক কয়েক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হওয়ার কথা নয়।
যুদ্ধবিরতি অথবা নতুন নিষেধাজ্ঞা যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার জন্য রাশিয়াকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর এই শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে মস্কো ও কিয়েভ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত। এমন অবস্থায় সময়সীমার আগে চুক্তি হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।
রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে ট্রাম্প অটল থাকবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। এমন নিষেধাজ্ঞা চীনের সঙ্গে ভয়াবহ বাণিজ্যযুদ্ধ ডেকে আনতে পারত।
তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, রুশ তেল কেনার কারণে চলতি মাসের শেষ দিকে আবারও ভারতের ওপরও শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। গত সপ্তাহে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ঘোষণা কার্যত নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা স্থগিত করেছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবে দেখার জন্য দুই পক্ষই বাড়তি সময় পেয়েছে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি