০৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ০৭:৫৯:১৭ অপরাহ্ন
মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির দায়িত্বে ড্রাই ডক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৭-২০২৫
মধ্যরাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির দায়িত্বে ড্রাই ডক

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালটি (এনসিটি) আগামী ছয়মাস পরিচালনার জন্য দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। বরিবার মধ্যরাত থেকে তারা (ড্রাই ডক) এনসিটি পরিচালনার ভার বুঝে নিয়েছে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তী অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্তও দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে।


চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডে (ডিপিএম) এ কাজ পেয়েছে চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড।


এর আগে টানা ১৭ বছর এ টার্মিনাল পরিচালনা করেছে দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।


দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য চারটি টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও লাভজনক টার্মিনাল হচ্ছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)।


বন্দর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চালু চারটি টার্মিনালের মধ্যে এনসিটি হচ্ছে বৃহত্তম, এখানে পাঁচটি জেটি রয়েছে।


গত অর্থবছরে এ টার্মিনাল থেকে বন্দরের মোট কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ ওঠানো-নামানো হয়েছে।

সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এনসিটিতে আট হাজার ২২১টি জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং এক কোটি ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩৯টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। এনসিটিতে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা থাকলেও গত বছর ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করা হয়েছে। এনসিটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৩০টির বেশি কনটেইনার জাহাজ ওঠানামা করানোর সক্ষমতা রয়েছে, অন্যান্য বার্থ এবং টার্মিনালে যা প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ১৭ থেকে ১৮টি।


চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনসিটিতে একসঙ্গে ভিড়তে পারবে চারটি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ)।


অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৮টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে ১৪টিই আছে এনসিটিতে। বিদেশি অপারেটর দিয়ে টার্মিনালটি পরিচালনার ঘোষণায় বিভিন্ন পক্ষের প্রতিবাদের মুখে নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি অনুমোদিত হয়েছে বন্দরের বোর্ড সভায়। এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ১৫৭ জন বিভিন্ন অপারেটর (৭৭ জন আরটিজি অপারেটর, ৩০ জন কিউজিসি অপারেটর, ৩২ জন স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার অপারেটর, ১২ জন এম্পটি হ্যান্ডলার অপারেটর, ছয়জন হারবার ক্রেন অপারেটর) ছাড়াও ১৪টি গ্যান্ট্রি ক্রেন চালানোর দক্ষ অপারেটর প্রয়োজন রয়েছে।


তবে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম সচল রাখতে আগের সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিবিদদের সহায়তা নেওয়া হতে পারে।

২০০৭ সালে ৫০৭ কোটি টাকায় নির্মিত টার্মিনালটি পরিচালনা নিয়ে শুরু থেকেই ছিল নানা জটিলতা। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এর দায়িত্ব পায় সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।


গত ২ জুলাই নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নৌবাহিনী এনসিটির বর্তমান জনবল দিয়েই টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এ লক্ষ্যে নৌবাহিনী ও বন্দরের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হবে এবং একজন নৌবাহিনী কমান্ডারের নেতৃত্বে একটি কমিটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। প্রয়োজনে আগের অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের সহযোগিতাও নেওয়া হতে পারে।


এনসিটি পরিচালনাকারী সাইফ পাওয়ারটেক জানায়, এনসিটি পরিচালনায় তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায়  তিন হাজার ৮০০ শ্রমিক বহাল থাকবে এবং তারা নৌবাহিনীকে শতভাগ সহযোগিতা করবে।


চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক দলের (সাবেক সিবিএ) প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত আরো আগেই নিতে পারত। গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিশেষায়িত যন্ত্রপাতিগুলো পরিচালনায় নির্ভর করতে হয় সাইফ পাওয়ারটেকের কর্মীদের ওপর। বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি তাদের নিজস্ব কর্মীদের এসব যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিত, তাহলে এই সংকট সৃষ্টি হতো না। এর পরও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’


চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফজলে একরাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাক আপ সুবিধা এবং ব্যাক আপ ইয়ার্ডে কার্গো ও কনটেইনার যেভাবে যাচ্ছে, তা ঠিকভাবে পরিচালিত হলে কোনো জটিলতা হওয়ার কথা নয়। এর পরও নতুন পরিচালনায় নৌবাহিনী কেমন করছে, সেটাও দেখার বিষয়। আশা করছি, কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের মতোই সচল থাকবে।’



 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘এখন থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) আওতায় টার্মিনালটির কার্যক্রম পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড। যন্ত্রপাতি, ম্যানপাওয়ার ও ট্রাফিক অপারেশন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি টিম করা হয়েছে। সবগুলোর জন্য আলাদা টিম থাকবে। সে অনুসারে টার্মিনাল পরিচালিত হবে। আশা করছি, কোনো সমস্যা হবে না। ড্রাইডক লিমিটেড প্রাথমিকভাবে ছয়মাসের জন্য অথবা পরবর্তীতে নতুন অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এনসিটি পরিচালনা করবে।’


শেয়ার করুন