০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৪৫:৪০ পূর্বাহ্ন
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অস্ত্র নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২৫
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অস্ত্র নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিবের অস্ত্র নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ব্লগার ও নাগরিক সমাজকর্মী মাহমুদুল হাসান কায়রো। সোমবার (৩০ জুন) সকালে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি জানান।


কায়রো তার স্ট্যাটাসে লেখেন, গতকাল বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদের অস্ত্র সংক্রান্ত ঘটনার পর তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি জাতিকে স্পষ্টভাবে ব্যক্তিগত অস্ত্র সংগ্রহে উৎসাহিত করেছেন।


তার ভাষায়, “নাগরিক হিসেবে আপনারও যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে, যথাযথ নিয়ম ফলো করে আপনিও অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন।”

কায়রো জানান, ওই পোস্টে ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ হাজার রিয়্যাক্ট, ১২ হাজার কমেন্ট এবং ১.৪ হাজার শেয়ার হয়েছে।


তিনি বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, এই বক্তব্য চরম আপত্তিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। এর অন্তর্নিহিত বার্তা হচ্ছে—নাগরিকরা যেন নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরাই নিয়ে নেন।


একজন উপদেষ্টার কাছ থেকে এমন বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করবে এবং সমাজের জন্য বিপজ্জনক।

তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য নাগরিকদের বলার শামিল যে, ‘নিজের নিরাপত্তা নিজেই দেখে নিন।’ এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করে।


এমন বক্তব্য অস্ত্র সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, উত্তেজনা ও সহিংসতার আশঙ্কা বাড়বে।

তার ভাষায়, বৈধ অস্ত্র পারিবারিক কলহ, প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব কিংবা মানসিক চাপের সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশে অস্ত্র ব্যবহারের যথাযথ প্রশিক্ষণের ঘাটতি এই ঝুঁকি আরও বাড়ায়। নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে দুর্বল আইনশৃঙ্খলা, পুলিশি ব্যর্থতা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির মতো মূল সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম’ মেনে অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া হলেও এটি মূলত প্রভাবশালী ও বিত্তশালীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এতে সমাজে ক্ষমতার বৈষম্য আরও গভীর হয় এবং গণতান্ত্রিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়ে।


কায়রো লেখেন, আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে রাত-বিরাতে পথ চলতে ভয় না লাগে, প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুলি না খেতে হয় এবং মতপ্রকাশে আতঙ্ক না থাকে। আমরা শক্তিশালী অস্ত্রধারী নাগরিক চাই না, চাই শক্তিশালী রাষ্ট্র। অস্ত্র নয়, দরকার কার্যকর এবং মানবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।


তার ভাষায়, নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার, পুলিশি সেবার স্বচ্ছতা এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা।


তিনি বলেন, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া এখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তার হাতে রয়েছে রাষ্ট্রের বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। তাকে অনুসরণ করছে দেশের কোটি মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ। এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের পোস্ট দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে ভয়ানক ভুল বার্তা দিয়েছে।


আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি, আসিফ মাহমুদের এ বক্তব্য আপত্তিকর। তিনি যেন এই পোস্ট প্রত্যাহার করেন এবং এর বিপরীত বার্তা জাতির সামনে তুলে ধরেন।


সবশেষে কায়রো বলেন, ব্যক্তিগত অস্ত্র নয়, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হোক রাষ্ট্রের অঙ্গীকার।


শেয়ার করুন