০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৭:৫৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
সাত গুরুত্বপূর্ণ মহানগর নেতৃত্ব সংকটে
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৩-২০২৪
সাত গুরুত্বপূর্ণ মহানগর নেতৃত্ব সংকটে

বিএনপির সাতটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগর শাখা নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। তেরোটি মহানগরের (সাংগঠনিক) মধ্যে খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা, গাজীপুর, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহীতে আগের মতো ত্যাগী ও পরীক্ষিত বড় কোনো নেতা তৈরি করতে পারেনি দলটি।


দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে সাংগঠনিক অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এসব মহানগরের অধিকাংশই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে কর্মী সংকটে পড়ছে। তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ওপর নির্ভর করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হয়।


এর কারণ হিসাবে নেতারা জানান, বরিশালসহ কয়েকটি মহানগরের কমিটি গঠনে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক তথ্য দেননি। এসব মহানগরের ত্যাগী ও প্রভাবশালী একটি গ্রুপকে বাদ রেখে অনেকটা ‘অপরিচিত’ নেতাদের দিয়ে কমিটি করেছে।


যে কারণে তারা সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারছে না। আর খুলনাসহ কয়েকটি মহানগরে ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেক নেতা রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। এসব মহানগরে দলের হাইকমান্ড বিশেষভাবে ‘নজর’ না দিলে অতীতের মতোই আগামী দিনেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আসবে না বলে মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।


জানা যায়, বিএনপির তৃণমূল থেকে উঠে আসা খুলনার পরীক্ষিত নেতা ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থাকাকালে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।


মহানগরের নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কারণে তাকে অব্যাহতি দেয় দল। মঞ্জু মহানগরের সভাপতিসহ নানা পদে ছিলেন।


খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে তার ত্যাগ সবাই স্বীকার করেন। অথচ মঞ্জু তিনবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেও এখনো তাকে দলে নেওয়া হয়নি। মহানগরে তার অনুসারীদেরও কোনো পদে রাখা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় আড়াই মাসের আন্দোলনে মহানগরের বর্তমান নেতৃত্ব মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে; কিন্তু মঞ্জুর মতো নেতাকে ব্যবহার করতে না পারাটা দলের ব্যর্থতা বলে স্থানীয় অনেকেই স্বীকার করেন।


একইভাবে বরিশালের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের মতামতকে উপেক্ষা করে মহানগরের কমিটি দেওয়া হয়। সেই কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদের পর্যন্ত রাখা হয়নি। এবারের আন্দোলনে এই নগরীর নেতাকর্মীরা সরোয়ার ও তার কর্মীবাহিনীর অনুপস্থিতি অনুভব করেছেন।


কুমিল্লায়ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ছিলেন জনপ্রিয় নেতা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। তার বদলে সেরকম জনপ্রিয় নেতা সেখানে আর তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।


গাজীপুর মহানগরে হাসান উদ্দিন সরকার ও সাবেক মেয়র প্রয়াত অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের মতো জনপ্রিয় নেতা তৈরি হয়নি। সর্বশেষ হাসান উদ্দিন সরকার মহানগরের কমিটিতে থাকাকালীন কর্মীবাহিনী তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান কমিটি গঠনের পর ফের দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।


এ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রয়াত মান্নানের পুত্র এম মঞ্জুরুল করীম রনিকে রাখা হলেও তিনি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে পারেননি। মাঠের আন্দোলনে তো নয়ই, কোনো সাংগঠনিক কাজেও তাকে মহানগরের নেতাকর্মীরা পাচ্ছেন না। ফরিদপুরে একসময় বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমান ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো নেতারা ছিলেন। কিন্তু এখন যাদের হাতে কমিটি দেওয়া হয়েছে, তারা ততটা সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারছেন না।


রাজশাহীতেও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর মতো নেতা একসময় মহানগরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এখনকার নেতৃত্ব দুই গ্রুপে বিভক্ত। নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা। অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও এটিএম কামালকেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।


পরে গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৈমুর ‘তৃণমূল বিএনপির’ মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়ে নির্বাচনেও অংশ নেন। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এ দুই নেতাকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও তারাই ছিলেন নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত মুখ। তাদের স্থলে এ রকম আর কোনো নেতা তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।


বিএনপির সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ১৩টি মহানগর রয়েছে। এগুলো হলো-ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, গাজীপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা মহানগর।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈসাকে আহ্বায়ক ও মামুন-অর-রশিদকে সদস্যসচিব করে রাজশাহী মহানগরের ৬১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। তখনই এ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মহানগরের একটি অংশ।


তারা অভিযোগ করেন, কমিটি গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন ভুলের খেসারত সামনে বিএনপিকে দিতে হবে। বরিশাল মহানগরেরও একই অবস্থা। নানা নাটকীয়তার পর মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদকে সদস্যসচিব করে একই বছরের ২১ জানুয়ারি কমিটি দেওয়া হয়।


স্থানীয় নেতারা জানান, মহানগরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীদের বাদ দিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়। একতরফা কমিটি করার কারণে মহানগরে তেমন সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারছে না বর্তমান নেতৃত্ব।


শেয়ার করুন