২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০২:২৮:৩৯ অপরাহ্ন
চলছে অমর একুশে বইমেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০১-২০২৪
চলছে অমর একুশে বইমেলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি

আসছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। আর পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। বর্তমানে চলছে চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি। সেই সুবাদে এখন সরব বাঙালির মননের উৎকর্ষতার প্রতীক এ মেলার দুই ক্যানভাসÑ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি আঙিনা। মেলার দুই প্রান্তে দৃশ্যমান হচ্ছে স্টল থেকে প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ব্যস্ততম কর্মযজ্ঞ। সরেজমিনে গিয়ে স্টলের কাঠামো গড়ার কাজের ব্যস্ততা দেখা মেলে। বাঁশের সঙ্গে বাঁশ জুড়ে কাঠামো তৈরি করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। ইতোমধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণের মেলামঞ্চ ও নজরুল মঞ্চের কাঠামো অনেকখানি দাঁড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে উদ্যান অংশের কাঠামো নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। এমন বাস্তবতায় আগামী ২৯ থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হবে স্টল, প্যাভিলিয়ন, মঞ্চসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজ।      


মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, চিরাচরিত প্রথা মেনে ২০২৪ সালের বইমেলা শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি। এদিন বেলা তিনটায় সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে এবারের বইমেলার অন্যতম গুরুত্বর্পূণ বিষয়, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সরাসরি একাডেমির হাতে থাকবে। অর্থাৎ মেলার বিন্যাস থেকে কোথায় কি থাকবে না থাকবে, তার সবটুকুই একাডেমির জনবলের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এজন্য একাডেমির নিয়োগকৃত নকশাবিদ থেকে স্থপতি ও অঙ্কন শিল্পীদের ব্যবহার করা হবে। একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটিসহ ছয়টি কোর কমিটি সমন্বয় করছে এই কাজের। গত বছরের মতো এবারও মেলার প্রবেশদ্বার থাকবে তিনটি। এগুলো হলো Ñ টিএসসির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার ও রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশ পথ। এই তিনটির মধ্যে টিএসসির প্রবেশদ্বার থেকেই শুরু হবে মেলা। এই অংশের ডানদিকের পুরো অংশজুড়ে থাকবে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্যাভিলিয়ন ও স্টল। আর উদ্যানের বাম দিকের অংশে ফায়ার সার্ভিসসহ সেবামূলক ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ থাকবে। এই অংশেই থাকবে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ। গত বছরের ধারাবাহিকতায় স্টল বা প্যাভিলিয়নসমূহ নান্দনিকভাবে বিন্যস্ত হবে। যাতে করে পাঠকদের স্টল খুঁজে পেতে কষ্ট না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে স্টল ও প্যাভিলিয়নের মাঝে পরিসর রেখে সারিবদ্ধভাবে স্টল নির্মিত হবে। ছোট কাগজের সম্ভার লিটল ম্যাগ চত্বর  থাকবে মুক্তমঞ্চের ডান পাশে। রমনা কালীমন্দিরের  নিকটবর্তী মেলার অংশটুকু হবে শিশুদের রাজ্য। এই অংশে শিশুতোষ গ্রন্থের স্টলের পাশাপাশি থাকবে সোনামণিদের মন রাঙানো শিশু চত্বর। সিসিমপুরের আয়োজনটিও অনুষ্ঠিত হবে এই অংশে।


এবার মেলার মুক্তমঞ্চে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে মাসব্যাপী নাট্যোৎসব। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়নি। অসাম্প্রদায়িকতা, ইসরাইল কর্তৃক গাজায় আগ্রাসনসহ বৈশ্বিক অস্থিরতা, পাঠাভ্যাস বৃদ্ধিসহ কয়েকটি বিষয়কে সম্পৃক্ত  করে প্রতিপাদ্য নির্ধারণের কাজ  চলছে। এবারের মেলায় খাবার দোকান থাকলেও সেখানে সরাসরি রান্নার ব্যবস্থা বা আয়োজন করতে দেওয়া হবে না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। মূলত দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে অল্প কিছু স্ল্যাকস আইটেম ও কফি শপের দোকান থাকবে। দর্শনার্থীদের কাছে যেন দৃষ্টিকটু না লাগে সেই বিবেচনায় খাবার দোকানগুলোকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশের পাশে ঘিরে দেওয়া হবে। এছাড়া ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশের প্রবেশ পথের পাশে এবার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।


অমর একুশে বইমেলার সার্বিক বিষয়ের সদস্যসচিব  সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে বইমেলা উদ্বোধন করবেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।  গত বছরের মতো এবারও আমরা একটি পরিচ্ছন্ন বইমেলা উপহার দিতে চাই। সেজন্য গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও নান্দনিক বিন্যাসে সাজবে বইমেলা। কোনো বইয়ের স্টল বা প্যাভিলিয়ন খুঁজে পেতে যেন দর্শনার্থীদের কষ্ট না হয়- সেই বিষয়টিও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বিন্যাসে। এছাড়া এবারের মেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করবে স্বয়ং বাংলা একাডেমি।


তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই মেলার আয়োজন করব। সেক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি নিযুক্ত নকশাবিদ, স্থপতি, অঙ্কনশিল্পী, রিটাচারসহ সংশ্লিষ্ট জনবলের সমন্বিত  ব্যবহার করা হবে। এতে করে মেলার পৃষ্ঠপোষকরাও পূর্বের চেয়ে বেশি সাড়া দিচ্ছেন। বিষয়টিকে তারা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।  প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এবার ৭৭টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছে। এর বাইরে আবেদনকারী  পুরনো প্রকাশনা সংস্থার মধ্যে  কোনো প্রতিষ্ঠানের স্টলের ইউনিট বাড়ানো হবে না। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২৩ জানুয়ারি স্টল বরাদ্দে লটারি করা হবে। লটারির প্রকাশকদের তাদের নির্ধারিত স্টলের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ২০২৪ সালের বইমেলার সময়সূচিতেও থাকবে পূর্বের ধারাবাহিকতা। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে বেলা ১১টায় খুলে মাঝে মধ্যাহ্নের বিরতি দিয়ে চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

শেয়ার করুন