২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:২৫:৪৫ অপরাহ্ন
গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, যুদ্ধবিরতি নিয়ে হতাশ কাতারসহ সংশ্লিষ্টরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২৩
গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ, যুদ্ধবিরতি নিয়ে হতাশ কাতারসহ সংশ্লিষ্টরা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বোমা হামলার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। নতুন একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে যারা কাজ করছিলেন তারাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত বোমা হামলার মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতির সুযোর্গ সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তিনি দোহা ফোরামে বক্তব্যকালে এ কথা বলেন। তবে তা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতার অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 


নভেম্বরের শেষের দিকে এক সপ্তাহের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল কাতার। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস পর্যন্ত হতাশা  ব্যক্ত করেছেন। তিনি সংস্থাটির মহাসচিব হলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সংশ্লিষ্ট অংঙ্গ সংগঠন থেকে তা অনুমোদন হয়ে আসতে হয়। এর ধারাবাহিকতায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সর্বশেষ ভোট হয় নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার কারণে ওই প্রস্তাব আটকে যায়।


এর পর মহাসচিব গুতেরেস হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্যারালাইজড বা অকার্যকর হয়ে গেছে। গাজায় ইসরাইলের নৃশংস যুদ্ধ কি ভয়াবহতায় পৌঁছেছে তা তার হতাশার মধ্য দিয়েই ফুটে উঠেছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। 


জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংগঠন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, গাজায় অর্ধেক মানুষ অনাহারে আছেন। প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে ৯ জনই অভুক্ত। এর ওপর সেখানে অব্যাহতভাবে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার বলেছেন, যুদ্ধ পুরোদমে চলছে। কয়েক দিনে কয়েক ডজন হামাস সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে বলে তিনি দাবি করেন। বলেন, তারা অস্ত্র সমর্পণ করেছে। নেতানিয়াহু বলেন, এটাই হামাসের বিনাশ শুরু।

 

অনলাইন বিবিসি লিখেছে, নেতানিয়াহু যখন এই মন্তব্য করেন তখন গাজায় মানবিক সংকটের আরও অবনতি হয়েছে। রোববার বিকেলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ৭ অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ১৮ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আল জাজিরার কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় হামাসের সশস্ত্র শাখা বলেছে, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রমাণ করেছে। ইসরাইল যতক্ষণ সংলাপে না বসবে, ততক্ষণ তারা আর কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেবে না। 


ওই বার্তায় হামাসের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছেন, ইসরাইলি সেনাদের ১৮০টি সামরিক যান পূর্ণাঙ্গভাবে অথবা আংশিক ধ্বংস করে দিয়েছেন তারা। হত্যা করেছেন অনেক ইসরাইলি সেনাকে। এখনও ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত আছে। এর ফল খুবই ভাল। 


ওদিকে দোহা ফোরামে ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের এজেন্সির প্রধান ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি বলেছেন, দুনিয়াতে একটি নরকে পরিণত হয়েছে গাজা। আমি এ যাবত যা দেখেছি, সেখানকার পরিস্থিতি সুনির্দিষ্টভাবে সবচেয়ে খারাপ। এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ সত্যয়ে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে লঙ্ঘন করতে দেওয়া যাবে না ইসরাইলকে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে তিনি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানান। 


দোহায় যখন এই মিটিং চলছিল, তখন গাজার দক্ষিণে ইসরাইল রক্তগঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে। গাজার উত্তরে অবস্থানরত মানুষদেরকে প্রথমে ইসরাইল দক্ষিণে খান ইউনুসের দিকে ঠেলে দেয়। এমনকি আল শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া রোগী ও সাধারণ মানুষদের বের করে দেয়। এসব মানুষ গাজার দক্ষিণে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পর এখন তাদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। নিরীহ মানুষকে খান ইউনুস শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। আল মাওয়াসিকে নিরাপদ এলাকা বলে বর্ণনা করা হয়। এটি ৮.৫ বর্গকিলোমিটারের একটি এলাকা, যা লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরের থেকেও আকারে ছোট। ইসরাইলের সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, খান ইউনুসে কঠিন যুদ্ধ চলছে। তিনি সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। রোববার সন্ধ্যা নাগাদ শহরটির কেন্দ্রস্থলে পৌঁছে যায় ইসরাইলি ট্যাংক। 


ওদিকে শহরটিতে অবস্থানরত জনগণকে দেখা যায় মৃতদেহগুলো একত্রিত করছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো আর্তনাদ করছেন। এদিন মন্ত্রীপরিষদে ভাষণ দেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা একদিকে হামাসকে নির্মূল করে দেওয়ায় সমর্থন দিতে এবং অন্যদিকে যুদ্ধবন্ধের জন্য চাপ দিতে পারেন না। যুদ্ধে বিরতি দিলে হামাস নির্মূল প্রতিরোধ করে দেওয়া হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৩টি সদস্য দেশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পর এ বক্তব্য রাখেন তিনি। 


শেয়ার করুন