২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:১৫:১২ অপরাহ্ন
মানবাধিকার লঙ্ঘন: চীন-রাশিয়াসহ ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১২-২০২৩
মানবাধিকার লঙ্ঘন: চীন-রাশিয়াসহ ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৩টি দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ ঘোষণা করেন। 


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে  অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ব্রিটেন ও কানাডার সঙ্গে যৌথভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেসব দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো ইরান, চীন, রাশিয়া, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।


বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের দেড় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রাখা তাদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।


নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন দুই ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মাজিদ দাস্তজানি ও মোহাম্মদ মাহদি খানপুর আরদেস্তানি নামের এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—২০২০ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত কুদস ফোর্স কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলায়মানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বেশ কয়েকটি ঘাঁটিতে নজরদারি ও হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাঁরা কাজ করেছেন। ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ধর্মীয়, বাণিজ্যিক এলাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে নজরদারি ও সম্ভাব্য হামলার জন্য কর্মী সংগ্রহ এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এই দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার।


আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের বেশ কয়েকজন নেতাও যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছেন। নারী নির্যাতন ও নারী অধিকার খর্ব করার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের অধিকাংশই তালেবান সরকারের ‘পুণ্যের বিকাশ ও পাপ প্রতিরোধ’ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, বেত্রাঘাত এবং মারধরের অভিযোগও রয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন গাও কি এবং হু লিয়ানহে নামে চীনের দুই সরকারি কর্মকর্তা। জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুরসহ অন্য সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। উইঘুরের নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগে কফকো সুগার হোল্ডিংসহ তিন চীনা কোম্পানিকেও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আনা হয়েছে।


ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিও পেঙ্গিউ এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এ ধরনের ঢালাও পদক্ষেপ চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। আমরা দৃঢ়ভাবে এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’


এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার তালিকায় লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক কর্মকর্তারা রয়েছেন। কঙ্গোতে ইসলামিক স্টেটের নেতা, হাইতির চারটি সন্ত্রাসী দলের প্রধান ও উগান্ডা প্রিজন সার্ভিসের কমিশনার জেনারেলও রয়েছেন এই তালিকায়।


নিষেধাজ্ঞা জারির পর এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মানবাধিকারের স্বীকৃতি ও রক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিগুলোর একটি। আমরা সব সময় মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না।’


শেয়ার করুন