০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৫৬:৩০ পূর্বাহ্ন
চাপ বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১১-২০২৩
চাপ বাড়াচ্ছে মূল্যস্ফীতি

গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিম, আলু আমদানির উদ্যোগ নেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতির পারদ নিচে নামেনি। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি বলছে, উচ্চ ও অনিশ্চিত মূল্যস্ফীতির কারণে রাজস্ব পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আগামীতেও মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি।


বৈশ্বিক মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি আগে থেকে ঊর্ধ্বমুখী। এই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে হরতাল-অবরোধ। ফলে মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও ঝুঁঁকির মধ্যে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা তেমন একটা কাজে আসেনি।


এ ছাড়া আগামী কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম। এতে গরিব মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা জটিল করে তুলছে মূল্যস্ফীতি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও রাজস্ব খাতের কার্যক্রমের স্থিতিশীলতা নষ্টের আশঙ্কা তৈরি করছে। পণ্যমূল্য, মজুরির হার ও সুদের হারের অনিশ্চয়তা সামগ্রিক চাহিদা ও প্রত্যাশার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করছে, যা রাজস্ব পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।


মিনি কর-মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজস্ব আহরণ কমবে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হলে রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব এবং চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ভ্যাট আহরণ বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি কমালে রাজস্ব কমবে।


মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিম্নআয়ের মানুষের সহায়তা বাড়িয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ট্রাক সেল, টিআর, কাবিখার জন্য আলাদাভাবে দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এ ছাড়াও ওএমএসের আওতা বাড়ানো হয়েছে।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর ৩০টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। প্রতি স্থানে ৩০০ টোকেন দেওয়া হচ্ছে। কেবল তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন টিসিবির ডিলাররা। একেকজন ক্রেতা দুই কেজি করে মসুর ডাল, আলু ও পেঁয়াজ এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকায় এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


জানা গেছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এক দশকের মধ্যে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়। টানা তিন মাস ধরে তা ১২ শতাংশের বেশি রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় সমান। অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্যে দেখা গেছে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ বছর মার্চ মাস থেকে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর আছে।


বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, ডিম, আলু এবং পিঁয়াজের দাম নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে এবং মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দেশের মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে এবং আমরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বৈশ্বিক কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ে ভীষণ দুঃসময় পার করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তার চেয়েও বেশি মানুষের কাছে সরকার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে।


শেয়ার করুন