০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৯:০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
১০ কোটি মানুষের ‘চিন্তামুক্ত’ বিনিয়োগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৩
১০ কোটি মানুষের ‘চিন্তামুক্ত’ বিনিয়োগ

মাওলানা আবদুল মান্নান এমপিওভুক্ত একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন ৩২ বছর। শিক্ষকতার পাঠ চুকিয়ে অবসরে গেছেন পাঁচ বছর হলো। কিন্তু পেনশনের টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন, কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। আশ্বাসেই কাটে দিন।


শুধু এ শিক্ষকই নন, হাজারো সরকারি কর্মচারীকে চাকরি জীবন শেষে সরকারি দপ্তরে এই কর্মকর্তা-ওই কর্মকর্তার কক্ষে কক্ষে ঘুরতে হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছেই পেনশনের ভোগান্তির চিত্রটা চিরচেনা।


এর মধ্যে নতুন করে চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা। পেনশন পেতে সরকারি দপ্তরে এখন ভোগান্তি চিত্র তাই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নাগরিক রয়েছেন, ১০ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৪ লাখ। এদের বাদ দিলে প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লাখ মানুষকে নিয়ে পেনশনের এ পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে সরকারকে।


সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে বেসরকারি খাতের কর্মজীবীরা বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানই তাদের জন্য বড় বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি খাতে সমস্যা না হলেও বাধা আসতে পারে বেসরকারি খাত থেকে। কারণ দেশে বেসরকারি খাতের বেশিরভাগ কোম্পানিই ছোট। অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপত্রও দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রস্তাবিত পেনশন সুবিধার আওতায় আনা কঠিন হবে। তবে সীমিত আকারে চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।


সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট সার্বজনীন পেনশনটি উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু অ্যাপভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা সাজানো হয়নি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডিজিটাল পেমেন্টের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার।


গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন সরকার যেটি করবে সেটি রেজিস্ট্রেশনে এনআইডির সঙ্গে মিল রেখে ডিজিটালি করা হবে। এখন ডিজিটাল টেকনোলজির সুযোগটা নিতে হবে। তিনি বলেন, এসব ব্যবস্থাপনা যেহেতু এটি এখনো ভলেন্টারি, কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। সেগুলোর প্রস্তুতির ব্যাপার থাকবে। যে অ্যাপটির কথা বলা হচ্ছে, সেটা যাতে ১০ বছর পর যাতে ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে সেগুলো দেওয়া যায়। হয়রানি যাতে না হয়, গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে যাতে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়।


পেনশন খাতে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উদ্যোগ ভালো, তবে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।


এদিকে প্রস্তাবিত পেনশনব্যবস্থার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। কেউ চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন জমার অর্থ নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থ জমা দিতে পারবেন। অর্থ জমা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব সাময়িক বন্ধ থাকবে। পরে জরিমানাসহ বকেয়া দিয়ে হিসাব চালু করতে পারবেন। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে নাগরিকরা পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। ৬০ বছর পূর্তিতে তারা নির্ধারিত হারে পেনশন পাবেন এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত তারা এ সুবিধা পাবেন। ৭৫ বছর বয়সের আগে কেউ মারা গেলে তার নমিনি পেনশন সুবিধা পাবেন। সে ক্ষেত্রে নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। তবে জমাকারীর অবর্তমানে এককালীন টাকা তোলার সুযোগ থাকবে না।


শেয়ার করুন