২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৮:১৬:৪৩ অপরাহ্ন
সমুদ্র ঘিরে ‘ব্লু ট্যুরিজম’
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৭-২০২৩
সমুদ্র ঘিরে ‘ব্লু ট্যুরিজম’

বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিস্তৃত জলরাশি ও এলাকা ঘিরে নতুন আশা দেখাচ্ছে ‘ব্লু ট্যুরিজম’, সুনীল পর্যটন বা সাগর পর্যটন। পর্যটন খাতের বিকাশে ব্লু ট্যুরিজম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সাগর পর্যটন বিকাশে তৎপর হলে স্থানীয় পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করা সম্ভব। সাধারণ পর্যটনের বাইরে শুধু সাগর ও তীরবর্তী এলাকা ঘিরে উন্নত দেশগুলোয় ব্লু ট্যুরিজমের সেবা বহু আগে থেকেই চালু আছে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে সমুদ্রভ্রমণ পর্যটন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। আগামী মাসে এটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ দেশের রাজস্ব আয়ে ব্লু ট্যুরিজম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বে ব্লু ট্যুরিজমের ধারণা নতুন না হলেও বাংলাদেশে এখনো সেভাবে এর বিশেষত্ব গড়ে ওঠেনি। বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের উপকূলীয় সমুদ্রসীমা আছে। এ ছাড়া আছে উপকূলীয় নদী, দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রবর্তী ছোটবড় ৭৫টি দ্বীপে রয়েছে বিচিত্র জীববৈচিত্র্য। এর সঙ্গে আরও আছে প্রবাল দ্বীপ, সমুদ্রঘাস প্রাচীর, বালুসৈকত, জলাভূমি, মোহনা, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদি। এ সবই সমুদ্রতীরবর্তী জলজ জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়া দেশজুড়ে নতুন নতুন সমুদ্রসৈকত আবিষ্কারের ফলে ব্লু ট্যুরিজমের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। এরই মধ্যে পর্যটক আকর্ষণে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সি ক্রুজ চালু হয়েছে। বিদেশি পর্যটক টানতে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) কক্সবাজারে নাফ ট্যুরিজম পার্ক, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এরই মধ্যে ২৫ বছরের জন্য (২০২৩-২০৪৭) একটি ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। প্রাথমিকভাবে ১১টি ক্লাস্টারের ২৫৫টি পর্যটক স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এ স্পটগুলো ইকো ট্যুরিজম, বিচ ও দ্বীপভিত্তিক ট্যুরিজম, জলজ পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চারভিত্তিক পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে। এ মাস্টারপ্ল্যানে উপকূলবর্তী ১৩টি দ্বীপের শিগগিরই উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। সমুদ্র পর্যটন মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হচ্ছে কোস্টাল ট্যুরিজম, দ্বিতীয়টি মেরিটাইম ট্যুরিজম।


কোস্টাল ট্যুরিজম কী : সমুদ্রতীরকে কেন্দ্র করে বিশ্রাম ও বিনোদনভিত্তিক যে পর্যটনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে একে কোস্টাল ট্যুরিজম বলে। সূর্য¯œান, সমুদ্রের পানিতে বিনোদনমূলক গোসল, সৈকতে হাঁটা, ঘুড়ি ওড়ানো, প্যারাগ্লাইডিং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ এর আওতায় পড়ে।


মেরিটাইম ট্যুরিজম কী : সমুদ্রকে কেন্দ্র করে যে পর্যটন, যেমন সাঁতার, সার্ফিং, ডাইভিং, সি-বার্ড ওয়াচিং, জলযানে সমুদ্রভ্রমণ ইত্যাদি মেরিটাইম ট্যুরিজমের আওতাভুক্ত। দেশের সমুদ্র পর্যটনকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে সমুদ্রভ্রমণ পর্যটন নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ নীতিমালার খসড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছে পাঠিয়েছে। মতামত পাওয়ার পর আগামী মাসে এটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে। জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী সমুদ্রভ্রমণে পর্যটকদের সেবা সহজ করতে চালু করা হবে ওয়ানস্টপ সার্ভিস। তখন সমুদ্রভ্রমণে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে একসঙ্গে। থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের মতো ভাসমান হোটেল-রেস্টুরেন্ট, অ্যাকোয়ারিয়ামসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিষয় এতে থাকবে। সমুদ্রভ্রমণ পর্যটন আকর্ষণীয় করতে ওয়াটার স্কিয়িং, জেট স্কিয়িং, সার্ফিং, সি কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং, সাঁতারের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া উপকূলীয় পাখি, ডলফিন ও প্রকৃতি উপভোগ, সমুদ্রসৈকত, দ্বীপ ভ্রমণ, ভাসমান হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম ও বিচ কার্নিভাল, জেলেপাড়া, শুঁটকিপল্লী ও মৎস্য আড়ত উপভোগ করা যাবে। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সুবিধার জন্য মোংলা, কর্ণফুলী ও পায়রা বন্দরে প্যাসেঞ্জার জেটি চালু করা হবে। সমুদ্রভ্রমণ পর্যটনে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্রুজশিপ কেনা, অ্যাকোয়ারিয়াম স্থাপন, ইকো রিসোর্ট রূপান্তর ইত্যাদি কাজে উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়।


 


বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন) মনোজ কুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমুদ্রভ্রমণ পর্যটন নীতিমালার খসড়ায় এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা মতামত দিয়েছেন। আগামী মাসে এটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে। এটি চূড়ান্ত হলে আশা করছি দেশে সমুদ্র পর্যটনের আরও বিকাশ ঘটবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজেন্টের চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্লু ইকোনমিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মেরিন ও কোস্টাল ট্যুরিজম, যা ব্লু ট্যুরিজম নামে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে পর্যটন খাতের বিকাশে সম্ভাবনার ক্ষেত্র আছে। আর এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আমাদের একটি নীতিমালা থাকতে হবে। এ নীতিমালায় সমুদ্রে জাহাজ যখন চলবে তখন চ্যানেল কেমন থাকবে, জাহাজের যাত্রীদের পোর্ট ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা, পোর্টকে কেন্দ্র করে বিশ্রামাগার, স্যানিটেশন, খাবার, বিনোদনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থাকতে হবে। কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো সমুদ্রসৈকতগুলোয় যদি পর্যাপ্ত সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করা যায়, একই সঙ্গে ব্লু ট্যুরিজমের নির্দিষ্ট পর্যটন স্থানগুলোর ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং করা যায়, তাহলে স্থানীয় পর্যটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করা যাবে, যা দেশের রাজস্ব খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুনীল পর্যটনের এ স্পটগুলোয় যদি যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করা হয় তাহলে এর সম্ভাবনা আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।’

শেয়ার করুন