জেরিয়েটিক হোমস- শেষ বয়সে সুন্দর মৃত্যুর পরিসেবা। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ অন্ততপক্ষে বৃদ্ধ মানুষদের শাম্তির মৃত্যুর কথা চিন্তা করার জন্য।
আমার যে বয়স হয়েছে, কখনই ভাবি নাই। নিজেকে মনে করতাম ৭০,র ছুঁই২ একজন ২৫ বছরের যুবক। হঠাৎ ০৯/৯/২৩ তারিখে হাত পা অবস, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, নিয়ন্ত্রণহীন প্রস্রাবে ভিজা কাপড় নিয়ে ঢাকা আর্মি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিজেকে আবিষ্কৃত করি।
ঢাকা আর্মি হাসপাতাল বাংলাদেশের অত্যন্ত সুন্দর পরিপাটি পরিবেশ সম্মত হাসপাতাল যা বাংলাদেশেতো নয়ই, অনেক দেশের সুন্দর পরিপাটি ও পরিবেশ সম্মত এমন হাঁসপাতাল আছে কি না সন্দেহ।
এখানকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা,খাবার পরিবেশনের সুসম ব্যাবস্হা, রোগীদের থাকার যায়গা, চিকিৎসা ব্যাবস্হা এবং তার ফলোআপ সব কিছুই সুনিয়ন্ত্রিত ও সুসৃংখল। নিচের লন গুলো যেমন সবুজ ঘাষে আবৃত দারন সব ফুল বাগানে পরিবেস্ঠিত, তেমনি সুউচ্চ ভবনের রুগীদের থাকার যায়গার পাশাপাশি রুগীরা যাতে একটু ঘোরাঘুরি করতে পারে তার জন্যে রয়েছে লন এবং বসার যায়গা।
আমার চলতহীন নির্বাক শরীরের অবস্হান হলো একটি নূতন উ্চু ভবনের ৮তলার একটি কেবিনে যা ঝকঝক তকতক করছে আলো বাতাস সব দিক দিয়ে।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী এবং ডাক্তার সাহেবদের তদারকি, মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টদের সতর্ক নজরদারী আমার সম্বিত ফিরতে তেমন সময় কাগলো না। তবে ব্রেনহোল অপারেশন প্রস্ততির জন্য প্রেসার নিয়ন্ত্রণ হীন ছিল। আমার সহধর্মিণী, যাকে আমি সময়মত সঠিক সাহচর্য দিয়েছি কিনা জানিনা, তিনি সার্বক্খনিক ভাবে আমার পাশে আছে এবং আমার সবকিছু কাছে থেকে নিবির পরিচর্যা করছে। আমার তিন ছেলে, তাদের পরিবার ছেলেমেয়ে, বড় ভাইয়ের ছেলে সাঈদ যাকে আমি সেই ৭৪,র দিকে আমার সাথে ঢাকাতে নিয়ে আসছিলাম, এখন সফল ব্যাবসায়ী এবং অন্যান্য আত্বিয়স্বজন আমার পাশে।
শুরুটা ছিল সুন্দর মৃত্যু; আমি বলতে গেলে বেশীরভাগ সময় ৮ তলা লনে হা্টাচলার চেস্টা করতাম যেখানে গিন্নি আমার হাত ধরে থাকতো যাতে পাক খেয়ে পরে না যাই। কেননা, ডাক্তার সাহেবরা যখনই আসেন, তারা প্রথমেই কৌশলে আমার সেনসেশন অবলোকন করেন। ৮ তলা লনের একপাক ঘুরতে আমার ১৭৮ স্টেপ লাগতো তাও আমি লক্খ রাখতাম। হাঁটার সময় যে জিনিষটি আমার মনে দাগ কাটতো, তাহলো এত সুন্দর কেবিন বা বেড, কিন্তু এর ভিতরের মানুষগুলো একএকজন বড়ো২ রোগের রুগী গিজগিজ করছে। কিন্তু কেউকি আমরা অনুধাবন করার চেস্টা করেছি এখানে যারা আছেন সেই বাইরের সুম্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মত সতেজ আছে। এখানে যারা আছেন, সবার কেবিন বলতে গেলে সার্বক্খনিক দরজাবদ্ধ। কিন্তু সেই দরজায় আবদ্ধ মানুষগুলো কেউ অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন, কিংবা ডাক চিতকার পারছেন
তারা কতটুকুই বা সুখে আছেন?
অপারেশন পরবর্তী রাত কেমন ভাবে শেষ হয়েছে জানি না। তবে সকালে দেখি পুরো বিছানা ভিজা দুর্গন্ধময়। কেয়ার টেকাররা তারাতারি তা পরিবর্তন করে দিল। কিন্তু আসিইউ আমাকে নূতন অভিগ্গতায় সমৃদ্ধ করলো। আমি অপারেশন টেবিলে যেমন শক্ত থেকে পুরো অপারশনটি উপভোগ করেছি। অনুধাবন করছি আর মনে মনে করুন আনন্দ উপভোগ করছি। অপারেশন টীম বেশ হাস্যরশ করছেন আর বলছেন,,আংকেল কেমন আছেন? আমরা আপনাকে পিপড়ার কামড়ের মত কস্ট দিব,আমি জবাব দিলাম ঠিক আছে। তবে কা্চি বা এ জাতীয় কিছু ূিয়ে আমাকে যে কাটছে কানের ভিতরে ক্যাচক্যাচ করছে। মনে হলো এই ভাবে মাথার বাঁম দিকে আরও কয়েকবার করলো এবং সর্বশেষে জিগ্যেস করলেন, আংকেল এখন কেমন আছেন। আমি শব্দ করলাম, ভাল আছি। আর মনে মনে ভাবলাম মুক্তিযোদ্ধারা একবারই মরে। সেই ৭১,র কথা মনে পরলো। তখন ইয়ং বয়স। কুস্টিয়া পিয়ার পুরে পাকিস্তানী হায়না বাহিনী আমাদের উপর আক্রমন করলো। কয়েক মিনিট আগে কমান্ডার মতি ভাই( নাটিয়াবাড়ী) তার রাইফেলটা আমার হাতে দিল। আমার সাথে সিনিয়র বন্ধু রইচ ভাই। তাকে কয়টা বাজে জিগ্যেস করতেই তিনি বললেন, রাত দেটটা বাজতে ৫ মিনিট বাঁকী। রইচ ভাইয়ের গায়ে সাদা সার্ট। তিনি আমাকে অকতসাত বলে উঠলো, কাদের শুয়ে পড়ো, আমার বোধ হয় গুলি লেগেছে। তার পরে ছত্রভংগ হয়ে কে কোথায় গেলাম জানিনা। তবে সেই আক্রমনে আমাদের ১০জন বন্ধু শহীদ হন যাদের স্মৃতিফলক পিয়ারপুরের মাটিতে জলজল করছে। আমিও সেদিন মারা যেতে পসরতাম।
বলছিলাম আইসিইউয়ের কথা। সকালে ঘুম ভাংলেই দেখি আমার সামনে দুইজন হাড্ডিসার মানুষ যাদের নাকে এবং গলায় লিকুইড ও অক্সিজেন দিতে। আমি সৃবভাবসুলভ ভংগীতে হাত নেড়ে ব্যায়ামের কাজটি করছি। আমার হাত উঠানো দেখে সামনের লোকটি কোনমতে হাত উঠিয়ে আমাকে সালাম দিলেন। তার পাইলট মেয়ে বাবাকে সার্বক্ষণিক ভাবে সেবা দিয়ে চলছেন। তিনি ছিলেন ৭১,র ১ম ওয়ার কোর্সের একজন অফিসার। আরেকজন এক সময়কার ডাকসাইটে রাস্ট্রদূত যাকে বলতে গেলে সবসময়ই পেইড এটেনডেন্ট সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এমন ডাকচিতকার পারছেন, যা দেখে আমিও কেঁদেছি। এটেনডেন্টরা মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়ে বলতেন, আংকেল এরকম করলে কিন্তু আপনাকে খাটের সাথে বেঁধে রাখব। ভদ্রলোক ভয়ে চুপথেকে আবার চিতকার করে বলতো, তোরা বিশ এনে দে, আমি বিশ খাব; ভদ্রলোকের স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন। আমেরিকাতে/ ঢাকা অভিজাতেও বাড়ী। কোন সময় দেখলাম একটা মেয়ে ছাড়া গ্যাতিগোস্ঠির কাউকে দেখতে আসতে।
কাজেই মৃত্যুসুখ, ভারতের প্রেসিডেন্ট এপিজে আবুল কামাম বা এরুপ পরিনত বয়সে অনুরুপ কারও মৃত্যুর মধ্যে নিহিত, নাকি জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ড সিপ জেরিয়েটিক সেন্টারের সুন্দর আবাসনে নাকি, গ্যাতিগোস্ঠি পরিবেস্ঠিতদের সামনে নাকি অন্য কোথাও?
আরও একটি অভিগ্যতার সন্চার হলো, সম্পদ ও আভিজাত্য মানুষকে পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন করে। ফলে বিপদে আপদে কাছের লোকও খোজখবর নেয় না।
এবার আমার সশুর মজিদ চৌ( ৯০+), র মৃত্যুপূর্ব বর্ননা দেয়ে শেষ করব। তিনি সারা জীবন সন্ধা সাতটার মধ্যে খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পরতেন এবং ভোর ৪টার আগেই ঘুম থেকে উঠে বাড়ীর চার পাশের খোজখবর নিতেন। মৃত্যুর একঘন্টা আগে সন্ধা সাতটার মধ্যে তার বড় ছেলেকে ডেকে বলতে লাগলো, ঢালার চরে অমুক বর্গাতির কাছে ২মন রশুন, অমুকের কাছে গম বা ধান কিংবা অন্য কিছু আছে। কালকে দিয়ে যেতে বলবি। এই বলে তিনি চাদর মুরি দিয়ে কাঠের চৌকির উপর সচারচর যেমন করে শোন, তেমনি চিত হয়ে শুয়ে পরলেন। ঘন্টা খানেক পরে তার সেই ছেলে আব্বাকে দেখতে গিয়ে দেখন, আব্বা আর নেই।
মৃত্যুসুখ, সে এক অচিন পাখী, সুম্দর পরিপাটি বিল্তিং বা অন্য কোথায়, তা আমরা কেউ জানিনা। শুধু এতটুকুই দেখি, তার যায়গা হয় ঘড়ের বাইরে যেখানে তিনি সারা জীবন দাম্ভিকতা কিংবা সহজ সরল ভাবে বসবাস করতেন। আল্লাহ মহান এবং সর্বশক্তিমান। আমিন। বীমুযো আ: কাদের মন্ডল, কাজিরহাট, মুক্তিযোদ্ধা চত্তর, আমিনপুর, বেড়া, পাবনা। ১৮/১০/২৩( অপারেশন পূর্বে ভাবলাম, মরতেতো হবেই, একটি ছবি তুলি।
তা হলে মৃত্যুসুখ?