রাণীনগরের কৃষি কোয়াটারগুলো ময়লার- আবর্জনার ডাস্টবিন ॥ ব্যবহার করা হচ্ছে গনশৌচাগার হিসেবে


, আপডেট করা হয়েছে : 15-10-2022

রাণীনগরের কৃষি কোয়াটারগুলো ময়লার- আবর্জনার ডাস্টবিন ॥ ব্যবহার করা হচ্ছে  গনশৌচাগার হিসেবে

নওগাঁর রাণীনগরে ইউনিয়ন

ভিত্তিক উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের (এস.এ.এ.ও) কোয়াটার-কাম-

অফিসগুলো বর্তমানে ময়লা-আর্বজনার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। যুগের পর

যুগ এই কোয়াটারগুলোতে সংস্কার না করায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের এই

কোয়াটারগুলো পরিত্যক্ত পড়ে আছে। অনেক আগেই খোয়া গেছে ভবনগুলোর

আসবাবপত্র ও অন্যান্য অবকাঠামোগুলো। নতুন করে নির্মাণ করা ছাড়া এই

ভবনগুলো সংস্কার কিংবা মেরামতের আর কোন উপায় নেই।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি

কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে পরামর্শ ও সেবা পৌছে দেবার উদ্দেশ্যে প্রতিটি

ইউনিয়নে মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য অফিস-

কাম-বাসা এবং এখান থেকেই খুব সহজেই দূর-দূরান্তের কৃষকদের কাছে

সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরনগুলো পৌছে দিতেই দেশ স্বাধীন হওয়ার

আগে ও পরে এই কোয়াটারগুলো নির্মাণ করা হয়েছিলো। এছাড়া উপ-

সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা এই কোয়াটারগুলোতে অবস্থান করে দিন-রাতের

যে কোন সময় ওই এলাকার কৃষকরা চাষাবাদ নিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে

সেই বিষয়ে পরামর্শ এবং সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন। কিন্তু সময়ের

পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ভবনগুলোতে আধুনিকতার কোন ছোঁয়া স্পর্শ

না করায় আস্তে আস্তে সেগুলো বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। যার কারণে

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা এই ভবনগুলোতে আর

বসবাস করেন না। ফলে বর্তমানে এই ভবনগুলো বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায়

পড়ে আছে। কোন কোন স্থানে ভবনগুলোকে ময়লা-আবর্জনা রাখার ডাস্টবিন

কিংবা গনশৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। আবার কোন

কোন এলাকায় ভবনের আশেপাশের জমি জোবর-দখল করে ব্যবহার করছেন

প্রভাবশালীরা। আবার যদি এই পরিত্যক্ত ভবনগুলোর জায়গায় আধুনিক মানের

ভবন নির্মাণ করে সেগুলোতে নিজ নিজ এলাকার উপ-সহকারি কৃষি

কর্মকর্তাদের বসবাস নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তাহলে প্রতিটি কৃষকদের

ঘরে ঘরে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি সেবা পৌছে দেওয়ার যে মহৎ উদ্দ্যোগ

সরকার গ্রহণ করেছে তা শতভাগ সফল হবে এবং দেশের কৃষি বিভাগ আরো

সমৃদ্ধশালী হবে বলে মনে করছেন উপজেলাবাসী।

উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম, রমিজ উদ্দিনসহ অনেকেই

বলেন, এক সময় তারা বেতগাড়ি বাজারে বিএস কোয়াটারে গিয়ে

যাবতীয় কৃষি সেবা পেয়েছেন। কিন্তু বহু বছর হয়ে গেলো ওই কোয়াটারে

আর কোন অফিসার থাকেন না। যার কারণে আর চাইলে অফিসারদের সব সময়


হাতের কাছে পাওয়া যায় না। প্রয়োজন হলে অফিসারদের সঙ্গে ফোনের

মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। আবার সার, বীজ কিংবা অন্যান্য কৃষি

উপকরনগুলো নিতে হলে ২৫কিমি দূরে উপজেলা কৃষি অফিসে যেতে হয়।

এতে করে কৃষকদের টাকা ও সময় দুটোই নষ্ট হয়। আর যদি বিএস

কোয়াটারগুলো থেকে এই কার্যক্রমগুলো চালানো হতে তাহলে শত শত কৃষকরা

খুব সহজেই বাড়ির কাছ থেকে এই কৃষি সেবাগুলো নিতে পারতো। সব

সময় মনিটরিং করার কারণে স্থানীয় কৃষি সেক্টরগুলো আরো উন্নত হতো।

উপজেলার একডালা গ্রামের কৃষক হানিফ মন্ডল বলেন, বর্তমানে এই

ভবনগুলোর করুন অবস্থা দেখে মনে হয় সবকিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া

স্পর্শ করলেও কৃষি বিভাগে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি আধুনিকতার ছোঁয়া

স্পর্শ করেনি। কৃষিই হচ্ছে আমাদের দেশের একমাত্র চালিকা শক্তি। তাই

কৃষিকে পেছনে ফেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া কখনই সম্ভব নয়। তাই দেশের

কৃষিকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে, অধিক ফলন পেতে এবং কৃষি নিয়ে

কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হলে স্থানীয় এই বিএস অফিস-কাম-বাসাগুলোর

কার্যক্রম নতুন করে চালু করার কোন বিকল্প নেই।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, এই ভবন-কাম-

অফিসগুলো যদি সচল থাকতো তাহলে উপজেলা কৃষি অফিসে চাপ কম

হতো। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকদের আর কষ্ট করে উপজেলা কৃষি অফিসে

আসতে হতো না। মাঠ পর্যায়ের অফিসারগুলো বাধ্যতামূলক যার যার এলাকায়

অবস্থান করতো যার কারণে কৃষকরা খুব সহজেই যাবতীয় কৃষি সমস্যার

পরামর্শ পেতো এতে করে কৃষি সেক্টরগুলো আরো সমৃদ্ধশালী হতো। ফলন বৃদ্ধি

পাওয়া, কৃষকদের খরচ কম হওয়াসহ যাবতীয় কৃষি বিষয়ে দেশ আরো এগিয়ে

যেতো। এছাড়া এই ভবনগুলোর জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে

যদি এখনই নতুন করে কোন কিছু করার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা না

তাহলে আর কিছুদিন পর এই জায়গাগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, আমি

প্রতিনিয়তই জেলার প্রতিটি উপজেলার এই বিএস কোয়াটারগুলো নিয়ে

দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবগত করে

আসছি। জানি না সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি না। তবে এই

কোয়াটারগুলো আবার দ্রুত সচল করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার

হোসেন হেলাল বলেন, আমিও এক সময় স্থানীয় বিএস কোয়াটার থেকে

কৃষি সেবা নিয়েছি। স্থানীয় কৃষকদের জন্য এই কোয়াটার-কাম-

অফিসগুলো আর্শিবাদ ছিলো। যুগের পর যুগ ধরে এই কার্যকম বন্ধ হওয়ার

কারণে উপজেলার একপ্রান্ত থেকে একজন কৃষককে কৃষি সেবা নিতে

আরেক প্রান্তের উপজেলা কৃষি অফিসে ছুটে আসতে হয় যা একজন


কৃষকের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। আমি এই বিষয়টি জাতীয় সংসদে

উপস্থাপনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করতে চেস্টা

করবো।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার