হালনাগাদ তথ্য নেই বিবিএস’র হাতে


, আপডেট করা হয়েছে : 26-05-2022

হালনাগাদ তথ্য নেই বিবিএস’র হাতে

দেশের জনসংখ্যা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কাছে হালনাগাদ তথ্য নেই। বেশ কয়েক বছরের পুরোনো তথ্যের ভিত্তিতেই চলছে নানা কার্যক্রম। এতে একদিকে যেমন সঠিক পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রেটিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। ফলে পুরোনো এসব তথ্যের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিবিএস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল সংকটসহ নানা কারণে হালনাগাদ তথ্য দিতে দেরি হচ্ছে। নতুন তথ্য পেতে আরও অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, হালনাগাদ তথ্য না থাকলে সঠিক পরিকল্পনা করা সম্ভব হয় না। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো করতে গিয়ে এ রকম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। পুরোনো হওয়ায় তথ্যের কার্যকারিতাও থাকে না। বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকে না। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক যেসব গুরুত্বপূর্ণ সূচক বের হয় সেগুলো তৈরির সময় এসব পুরোনো তথ্য ব্যবহার করায় আমাদের দেশের সঠিক অবস্থান অনেক সময় প্রতিফলিত হয় না। অর্থাৎ তারা যে রেটিং দেয় বাস্তবে দেখা যায়, এর চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছি আমরা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ৩ থেকে ৭ বছর আগের পুরোনো তথ্য দিয়ে দেশের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। বিশেষ করে বেকার জনসংখ্যা এবং কর্মসংস্থানের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটিরই হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। এরই মধ্যে করোনা মহামারির মতো দুর্যোগ গেছে। এছাড়া গত ৫০ বছরেও বিশ্ববাজার এত অস্থির হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে হালনাগাদ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বিবিএসের হাতে দেশের মোট জনসংখ্যার যে তথ্য আছে তা ২০১১ সালের। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১১ বছর। প্রতি ১০ বছর পরপর এই শুমারি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি এবার হয়নি। কেননা প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটি করতে গিয়ে ট্যাব ক্রয়সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়। তার আগে করোনা মহামারি শুরু হলে পুরো কার্যক্রমই বাধাগ্রস্ত হয়। আগামী ১৫-২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে জনশুমারি ও গৃহগণনার মূল কাজ। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এবারের জনশুমারির মাধ্যমে অনেকগুলো হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করা হবে। শুমারিতে ৩৫টি প্রশ্ন এবং ১০টি ‘সাব’ প্রশ্ন করা হবে। এগুলোর মধ্য দিয়ে অনেক ধরনের তথ্য বেরিয়ে আসবে। যেমন-দেশের মোট জনসংখ্যা, বাড়িঘরের সংখ্যা এবং সেগুলোর অবস্থা, বিদ্যুৎ ব্যবহার, দেশে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কত আছে, এ দেশে কতজন বিদেশি নাগরিক রয়েছে। এছাড়া পরিবারে কতজন কাজ করে এবং কী কাজ করে, কোন মানুষের জেলা কোথায় এসবসহ আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য আসবে।

বিবিএস’র বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে হয়েছিল সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। এই সার্ভের মাধ্যমে দেশের বেকার সংখ্যা কত? কর্মসংস্থানের কী অবস্থা ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এই সার্ভে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি অজ্ঞাত কারণে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ৫ বছর আগের পুরোনো তথ্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে দেশের দারিদ্র্য হার। সেটিও পাঁচ বছরের পুরোনো। ‘খানার আয়-ব্যয় জরিপ’ এখন নতুন করে করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এই জরিপের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য হার, মানুষের আয়, মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণ, শিক্ষার হার, ধনী ও গরিবের মধ্যে আয় বৈষম্য ইত্যাদি তুলে আনা হয়। করোনা মহামারি চলাকালে দেশের কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়েছে এ সংক্রান্ত একটি জরিপ মোবাইলের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু সেটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, হালনাগাদ তথ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ২২ মে প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ দারিদ্র্য মানচিত্র-২০১৬। ২০১৯ সালে এটি তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে এ সংক্রান্ত একটি অনুশীলন শেষ করা হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং ২০১১ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনাকে উৎস হিসেবে ধরে পুরোনো উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া একইদিন প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ পুষ্টি মানচিত্র-২০১৯। সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে প্রধানত ২০১১ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা এবং ২০১৯ সালের মাল্টিপুল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) তথ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও বেশ কিছু সার্ভে করা হয়েছে তিন বছর আগে। এর মধ্যে রয়েছে-সার্ভে অন ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি (এসএমআই)। এটি করা হয়েছে ২০১৯ সালে। কিন্তু বিবিএস-এর ওয়েবসাইটে নতুন তথ্য হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একই বছর করা হয়েছে কৃষিপণ্যের স্থূল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত জরিপ, বিতরণ ব্যবসা জরিপ এবং রিপোর্র্ট অন দ্য সার্ভে অব প্রাইভেট হেলথ কেয়ার ইনস্টিটিউশন।

বিবিএস-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। এর মধ্য দিয়েও আমরা নতুন নতুন অনেক জরিপ ও সার্ভে করে যাচ্ছি। রুটিন কাজের বাইরে গিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। ফলে যে কোনো জরিপের প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় লাগে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আপডেট ডাটা দেওয়ার। সেই সঙ্গে এসডিজির তথ্য ঘাটতি পূরণেও নতুন নতুন জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। আগের তুলনায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় সক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, এ বছর জনশুমারি ও গৃহগণনা, দারিদ্র্যের অবস্থা জানতে খানা আয়-ব্যয় জরিপ এবং শ্রমশক্তি জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে ২০২৩ সাল নাগাদ অনেক হালনাগাদ তথ্য আমাদের হাতে চলে আসবে। বিবিএস মহাপরিচালক জানান, এখন বছরে একবার মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য দেওয়া হচ্ছে। সেটি ত্রৈমাসিকভিত্তিক দেওয়ার কাজ চলছে।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার