দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স) দ্রুত বেড়ে চলেছে, যার ফলে সাধারণ সংক্রমণও চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। রোগীর আইসিইউতে ভর্তির সময় ও চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মৃত্যুঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায়। সোমবার ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট ২০২৪-২০২৫’ প্রকাশ করা হয়।
🔹 গবেষণার মূল তথ্য
৪৬,২৭৯টি রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
পরীক্ষিত নমুনার ২৪% অর্থাৎ ১১,১০৮টি নমুনায় জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে।
বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক যেমন সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, জেন্টামাইসিন, মেরোপেনেম এবং টিগেসাইসিলিন অনেক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর নয়।
ই.কোলি, স্যালমোনেলা টাইফি, অ্যাসিনেটোব্যাক্টর, ক্লেবসিয়েলা এবং ক্যান্ডিডা জাতীয় ছত্রাকের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা গেছে।
🔹 সংকটের প্রভাব
সাধারণ সংক্রমণও চিকিৎসা করা কঠিন হচ্ছে।
রোগীদের আইসিইউতে ভর্তির সময় ও চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মৃত্যুর ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে।
🔹 মূল কারণ
অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।
ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন।
ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করা।
প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার।
বিএমইউ মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, “জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তাই জনগণকে ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না নেওয়ার এবং কোর্স সম্পূর্ণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
🔹 সুপারিশ ও প্রতিকার
প্রতিবেদন অনুযায়ী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ হলো—
চিকিৎসকদের জন্য ল্যাব টেস্টভিত্তিক প্রেসক্রিপশন বাধ্যতামূলক করা।
হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ প্রোটোকল জোরদার করা।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি।
ওষুধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।
প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করা।
🔹 বিশেষ মন্তব্য
বিএমইউ ভিসি ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে হবে। গবেষণা, গাইডলাইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব।”
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান ভিডিওবার্তায় বলেন, আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকলে মানুষ সেই মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক সংকটের এই চিত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা।