 
                                
                             
চলতি মাসে ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি সংস্করণে টানা পাঁচ সিরিজ জয়ের হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে, কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ খোয়ানোর ফলে সেই জয়ের ধারা ব্যাহত হলো।
দুই বছর আগেও ওয়ানডেতে সেরা দল হিসেবে বিবেচিত হলেও আফগানদের কাছে সেই ধাক্কা সামলে সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ধারাবাহিকভাবে সফল হচ্ছিল বাংলাদেশ; জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও আফগানিস্তানকেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে এবং আফগানদের মরুভূমির বুকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছে। কিন্তু এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামেরে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে দুটি ম্যাচই বাংলাদেশ হারল ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারফরম্যান্স বলার মতো না হলেও এবং তারা নেপালের কাছে সিরিজ হেরে এলেও, বাংলাদেশ দল তাদের কাছে সিরিজ খুইয়েছে। দুটি ম্যাচেই হঠাৎ ধসের রোগ আবারও জেঁকে বসেছে দলে, যেখানে সেট ব্যাটাররা খেলা শেষ না করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়ে চাপ বাড়াচ্ছেন।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করার সময় লিটন দাস কাঠগড়ায় তুলেছিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারীকে, যার বোল্ড হওয়া লিটনের কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল। সেই ম্যাচে ৭৭ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর লোয়ার অর্ডারে তানজিম হাসান সাকিব ও নাসুম আহমেদের ব্যাটিংয়ে দল ১৪৯ রান পর্যন্ত গিয়েছিল, যেখানে ৩৩ রান করে তানজিম সাকিব সংবাদ সম্মেলনে একজন স্বীকৃত ব্যাটারের অভাব বোধ করছিলেন।
পরশু দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ছিল ব্যাখ্যাতীত, যেখানে ১৫০ রানের লক্ষ্যে নেমে তারা ১৪ রানে হেরেছে। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেখানে এক পর্যায়ে ২০০ রান হওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে তারা ১৪৯ রানে আটকে যায়, আর এই জন্য লিটন-তানজিদ তামিম বোলারদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
বোলারদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে লিটন নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেন, ‘গত দু-তিনটি সিরিজে বোলাররা সত্যি অসাধারণ বোলিং করেছে।’ বারবার জীবন পেয়েও সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেননি ব্যাটাররা। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে শেষ ১৮ বলে ৩৩ রানের সমীকরণ যখন স্বাগতিকদের, সে মুহূর্তে তানজিদ তামিম আউট হওয়ার পর ইনিংসটি ‘তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে’ বলে মন্তব্য এসেছে।
আত্মসমালোচনা করে তানজিদ তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আসলে উইকেট যা ছিল, সেট ব্যাটারকেই খেলা শেষ করতে হবে। বল ব্যাটে সেভাবে আসছিল না। নতুন ব্যাটারদের জন্য একটু কঠিন।’
সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমে পরশু একাদশ নির্বাচনেও টিম ম্যানেজমেন্ট তালগোল পাকিয়েছে। আফগানদের বিপক্ষে নিশ্চিত হার থেকে দুবার বাঁচানো নুরুল হাসান সোহানকে বসিয়ে উইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে খেলানো হয়েছে জাকের আলী অনিককে।
জাকের ১৭ বলে ১৮ রান করে নায়ক হওয়ার সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন। অফসাইডের বল লেগসাইডে টানতে গিয়ে বারবার পরাস্ত হওয়ার পরও তার টেকনিকে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অফফর্মের কারণে একাদশেও নিয়মিত নন তিনি। অথচ গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ, তখন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে নজর কেড়েছিলেন জাকের। এক বছরের মধ্যে জাকের নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন এবং বাংলাদেশের কাছেও বড্ড পরিচিত হয়ে ওঠা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট কেমন অচেনা লাগছে।
আজ চট্টগ্রামে ধবলধোলাই না এড়ানো গেলে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে একটি ‘ভালো ধাক্কা’ লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।